খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তৈবুংমা-অ-খুম বগনাই উৎসবের উদ্বোধন

fec-image

চিনি হুকুমু চিনি সিনিমুং অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু উৎসব। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে গঙ্গা মা -এর উদ্দেশ্যে পুষ্প অর্পন ও নববস্ত্র নিবেদন করা হয়।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে তৈবুংমা-অ-খুম বগনাই উৎসবটি শুভ উদ্বোধন করেন ভরত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির’র সহধর্মিণী মল্লিকা ত্রিপরা। চৈত্র সংক্রান্তির পূর্ব-দিনে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন এরা আগামী দিনের সুখ ও সম্পদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। এরা নদীর তীরে, মন্দিরে, বিশেষ পবিত্র স্থানে ফুল, ধুপ এবং দীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এই দিন তারা বিশেষভাবে গবাদি পশুর পরিচর্যা করে। পশুদের পানি দিয়ে পরিষ্কার করে গলায় মালা পরায়। এরপর কিশোর কিশোরীদের ফুল নিয়ে খেলা শুরু হয়। এছাড়া পাড়া প্রতিবেশীদের তারা ফুল উপহার দেয়।

বিসুমা: চৈত্র সংক্রান্তিতে এই উৎসব করা হয়। এ দিনকে বলা যায় খাদ্য উৎসব। এদিন তারা পুরানো বিবাদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের বাড়িতে মিষ্টান্নসহ নানা ধরনের মুখোরোচক খাবার পাঠায়। এই উৎসবের প্রধান আকর্যণ থাকে জনপ্রিয় খাবার ‘গণত্মক বা পাচন’। এর পাশাপাশি থাকে নানা ধরনের পিঠা, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ ধরনের সবজির সংমিশ্রণে তৈরি হয় বিশেষ ধরেনর খাবার। এদিন এরা দরিদ্র লোকদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। গ্রামের মানুষ গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ায় এবং পরস্পরে কুশালাদি বিনিময় করে। এই দিনে সকল শ্রেণির মানুষ সাধ্যমত সাজগোজ করে।

বিসিকতাল: এই দিন নববর্ষকে বরণ করা হয়। নববর্ষের প্রথম দিনে এরা আগমী দিনের সুখ ও সম্পদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। এ দিনের বিশেষ আয়োজন থাকে ফুল ও পানি নিয়ে খেলার আয়োজন। বিশেষ করে পানি নিয়ে খেলাটা উৎসবটি বৈসুর-এর প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য পানি দিয়ে পুরানো দিনের সকল গ্লানি ধুয়ে দেয়া। কিন্তু এ খেলাটিতে প্রতিজ্ঞার এই বিষয়টির চেয়ে বড় হয়ে উঠে পানি ছুঁড়ে উল্লাসে মেতে ওঠা । অবশ্য এই উৎসবের আগে জলপূজা করার রীতি আছে। মারমা যুবক-যুবতীরা তাদের পছন্দের মানুষটির গায়ে পানি ছিটানোর মাধ্যমে সবার সামনে ভালোবাসা প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে পরস্পরের বন্ধনও দৃঢ় হয়।

হারি বৈসু: বৈসু উৎসবের প্রথম দিনকে হারি বৈসু বলা হয়। এ দিনে, ফুল দিয়ে ঘর-বাড়ি সাজানোর দিন। হারি বৈসুর আগের রাত গ্রামের ত্রিপুরা কাশোর কিশোরীরা ফুল তোলার জন্য সারারাত জেগে থাকতো। টর্চ লাইট, হারিকেন নিয়ে পাড়ার এ মাথা থেকে ওই মাথা ছুটোছুটি করে মাতিয়ে রাখতো তারা। ভোরে ফুলগুলো ফুটতে শুরু করার সাথে সাথে কিশোর কিশোরীরাও ফুল তোলা শুরু করে দেয়। সারারাত ফুল তোলে সকালে ফুলের মারা গেঁথে বাড়ির প্রতিটি দরজায় ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়। নিমফুল, বেত(রাইচৌক) পাতা, খুমচাক (নাগেশ্বর), খুমতাই, চুয়ানথি, খুম রিংকুসহ নানান ধরণের ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়ে ঘরগুলোকে সুবাসিত করে তোলা হয়। ঘরের গৃহপালিত প্রাণী গরু-ছাগলকে ফুলের মালা পরানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন