‘খাগড়াছড়িতে দুই দশকে বৌদ্ধদের সংখ্যা ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে’

New_Picture

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

গত দুই দশকে বাংলাদেশের অন্যতম পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে এর বিপরীতে লক্ষণীয়ভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০.৫০ শতাংশ। বৌদ্ধদের আদর্শ তথ্য কেন্দ্র ধম্মইনফো এ তথ্য জানিয়েছে। 

তবে এই রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ রিপোর্টটি পড়লে বোঝা যায় মুসলিমদের টার্গেট করেই রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে। কেননা, গত দুই দশকে কী পরিমাণ লোক খ্রিস্টান হয়েছে, তাদের বৃদ্ধির হার এবং গির্জার সংখ্যা কী পরিমাণ বেড়েছে তা বলা হয়নি এই রিপোর্টে। এ ছাড়াও জনসংখ্যার ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের যে পরিসংখ্যান এই রিপোর্টে দেয়া হয়েছে তা বস্তুনিষ্ঠ নয়। কেননা সরকারীভাবে জেলা তথ্য বাতায়ন সূত্রে খাগড়াছড়ি জেলার জনমিতি হচ্ছে,

ক) উপজাতি-২,৬৯,৯০৪জন (৫২%),  [চাকমা-১,৪৬,০৪৫, মারমা-৫৫,৮৪৪, ত্রিপুরা-৬৭,৩৪২, অন্যান্য-৬৭৩]। (খ) অ-উপজাতি-২,৪৮,৫৫৯ জন (৪৮%)। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জেলা তথ্য বাতায়নে এই জেলার উপাসনালয়ের পরিসংখ্যান হচ্ছে,

ধর্মীয় উপাসনালয়ঃ ৭৫১টি। (ক) মসজিদ-২৫৫টি। (খ) বৌদ্ধ মন্দির (ক্যাং)-২৬৩টি। (গ) মন্দির-২০৭টি।    (ঘ) গীর্জা-২৬টি।

অথচ অসমির্থত উইকিপিডিয়ার বরাতে এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে খাগড়াছড়িতে মোট ২৪৭২ টি মসজিদ রয়েছে যার বিপরীতে বৌদ্ধ বিহারের সংখ্য মাত্র ৯৩৭ যা প্রায় মসজিদের সংখ্যার প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ। অন্যদিকে হিন্দুদের মন্দির রয়েছে প্রায় ১৭০টি। এ থেকেই  সমগ্র রিপোর্টটির বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে ধম্মইনফোর রিপোর্টটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো:

“২,৭৪৯.১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় উপজেলার সংখ্যা ৮ টি এবং সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ৬,১্‌৯১৭। এর মঝে, বৌদ্ধ ২,৩্‌৩০৯ জন এবং মুসলিম ২,৭্‌২৫৮ জন। ফলে এককালের বৌদ্ধ অধ্যুষিত এই পার্বত্য জেলা এখন পরিণত হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে। উপরন্তু, পরিসংখ্যান বলছে, পুরো খাগড়াছড়িতে মসজিদের সঙ্খ্যা বৌদ্ধ বিহারের সঙ্খ্যার চেয়ে প্রায় ৩ গুন বেশী। মোট ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মসজিদ যেখানে মাত্র ২৬ শতাংশ বৌদ্ধদের প্যাগোডা বা বিহার।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্স –এর ১৯৯১ এবং ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্যের উপরে ভিত্তি করে খাগড়াছড়ির জনসংখ্যা নিয়ে ধম্মইনফোর এক গবেষণায় এ ফলাফল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরতিহীনভাবে হামলা নির্যাতন ও ধর্মান্তরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধম্মইনফোর পক্ষ থেকে এই গবেষণা চালানো হয়।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯১ সালে খাগড়াছড়ির প্রায় ৪৮ শতাংশ জনসংখ্যা ছিল বৌদ্ধ এবং প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল মুসলিম। অথচ মাত্র দুই দশক পরে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে উলটে গেছে পুরো চিত্র। ২০১১ সালে এসে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ১০ শতাংশেরও বেশী কমে ৩৮ শতাংশে এসে দাড়িয়েছে যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ৪৫ শতাংশে এসে দাড়িয়েছে। মাত্র ২ দশকে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি পুরোই পালটে গিয়ে বর্তমানে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে খাগড়াছড়ি। ১৯৯১ – ২০১১, গত ২০ বছরে জনসংখ্যার হারের পরিবর্তনের সামগ্রিক চিত্র নিম্নরূপঃ

change_in_pop

ধর্মীয় আগ্রাসনের চিত্র আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে উপজেলাভিত্তিক চিত্রে। ২০১১ সালের আদমশুমারি মোতাবেক খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ৬,১৩,৯১৭ (ছয় লক্ষ তের হাজার নয় শত সতেরো)। আর এই মোট জনসংখ্যার প্রাপ্ত সকল তথ্য বিশ্লেষণ করলে ধর্ম অনুযায়ী জনসংখ্যার হার নিম্নরূপঃ

 upazila_table

upazila_dist
উপজেলা ভিত্তিক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর এই চার্ট এবং টেবিল লক্ষ্য করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, খাগড়াছড়ি সদরে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা অনেক বেশী (প্রায় ৫১ শতাংশ)। অন্যদিকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যার আধিক্য রয়েছে মাটিরাঙ্গা (৩১ শতাংশ), রামগড় (১৫ শতাংশ) ও মানিকছড়িতে (১৫ শতাংশ)। অত্যন্ত লক্ষণীয় যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মাটিরাঙ্গা এবং খাগড়াছড়ি সদর – উভয় উপজিলায় গড়ে ২৮ শতাংশ করে। বৌদ্ধদের আধিক্য রয়েছে শুধুমাত্র দিঘীনালায় (২৬ শতাংশ) যদিও খাগড়াছড়ি সদরে প্রায় ২০ শতাংশ জনসাধারণ বৌদ্ধ।
এই বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা আগের চাইতে অনেক বেশী কমে গেছে এবং দিনে দিনে অন্যান্য ধর্মের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে।

 rel_inst

এই আগ্রাসনের অন্যতম প্রমান মেলে উইকিপিডিয়ার তথ্যে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে খাগড়াছড়িতে মোট ২৪৭২ টি মসজিদ রয়েছে যার বিপরীতে বৌদ্ধ বিহারের সংখ্য মাত্র ৯৩৭ যা প্রায় মসজিদের সংখ্যার প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ। অন্যদিকে হিন্দুদের মন্দির রয়েছে প্রায় ১৭০টি।

নীরবে নিভৃতে এই ব্যাপক ধর্মীয় বিপ্লব ঘটে যাওয়ার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে হতে পারে অনেক বিতর্ক। অনেকেই দায়ী করতে পারেন বাঙ্গালী মুসলিম সেটেলারদের ক্রমাগত আগ্রাসন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর আগ্রাসী সম্পদ আহরনের প্রচেষ্টা, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়া কিংবা পার্বত্য নেতৃবৃন্দের সামগ্রিক ব্যর্থতা। তবে একথা সত্য বাংলাদেশের বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ এবং পার্বত্য বৌদ্ধদের অতি দ্রুত দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী কয়েক দশকে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী খাগড়াছড়ি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। এর মানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়িকে বৌদ্ধদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে জানতেই পারবেনা।

 তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্স, উইকিপিডিয়া।”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “‘খাগড়াছড়িতে দুই দশকে বৌদ্ধদের সংখ্যা ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে’”

  1. Buddhistder songkhatu kombe na tu kara kombe. Arakan Rajje Buddistder dopte ar Muslimra refugee. Soto soto hotta holu, kunu bichar hoini.Parbattya chattagrame o kom noi. Ekhon muslimra oikoboddho. Tader target ektai- Arakan ar CHT. Ekhon sobaike eke eke Arakan, Mizuram ba Tripura rajje palate hobe. Arakan tu ekhon Rohynga der Rajjo. tai amra sobai manush-ekjon arek jonke nirjaton kora thik noi. ekhon sobaike mile ekshathe thakte hobe. Bangali, Pahari sobaike shantir jonno kaj korte hobe. ugro ba ostro dye CHT somosya bastobayon hobe na.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন