খালে মাটির দুটি বাঁধে বাড়বে বোরো চাষ, কৃষকদের মুখে স্বস্তির হাসি

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় টইটং খালে নির্মিত হয়েছে দুটি মাটির বাঁধ। এ দুটু বাঁধে বাড়বে বোরো চাষ ফলে কৃষকদের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। রবি মৌসুমে বোরো চাষ ও শীতকালীন সবজি উৎপাদন বাড়াতে প্রবাহমান জোয়ার ভাটার ওই খালে দেওয়া হয়েছে এ দুটি বাঁধ। সরকারি বরাদ্দ থেকে উন্নয়ন ব্যয় সমন্বয় ও মেটানো হয়েছে একটি বাঁধের ব্যয়। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ব্যয় থেকে নির্মিত হয়েছে অপর একটি পৃথক বাঁধ।

সম্প্রতি উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ভৌগলিক চৌহর্দ্দির মধ্যে বাঁধ দুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নাপিতখালীর দক্ষিণপাড়ায় টইটং খালের উপর বড় পরিসরে একটি মাটির বাঁধ নির্মিত হয়েছে। অপর বাঁধটি তৈরী করা হয়েছে টইটং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাচারীপাহাড় এলাকায়। বাঁধ দুটির দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। টইটং খাল প্রমত্তা নদী ভোলা খালের শাখা নদী। এর অববাহিকা চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ টইটং ও বারবাকিয়ার সু-উচ্চ পাহাড় থেকে। অববাহিকা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার মিঠা পানি উজানের দিকে নেমে আসে।

শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষ ও সবজি আবাদ ফলানোর জন্য মিঠাপানি সংরক্ষণ করতে বাঁধ দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় পেকুয়ায় ৩টি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছিল। মাতামুহুরী নদীর বাগগুজারা, ভোলা খালের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী ও ভোলা খালের শাখা নদী টইটং খালের নাপিতখালী পয়েন্টে এ ৩টি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়।

চলতি মৌসুমের আগেই নাপিতখালী অংশে টইটং খালের উপর নির্মিত রাবার ড্যামটি ছিদ্র হয়ে যায়। ধরা পড়ে এর কারিগরি ত্রুটি। মারাত্মক ছিদ্র হয়ে যায় রাবার ড্যামটি। এতে করে চলতি বুরো মৌসুমে বুরো চাষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। কয়েক হাজার কৃষক উৎপাদন সংকটে পড়ে। প্রবাহমান টইটং খালের রাবার ড্যাম ছিদ্র থাকায় টইটং ও পার্শ্ববর্তী বারবাকিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বুরো উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে যায়।

কৃষকের মাথায় হাত উঠে। এ দিকে গত ১ সপ্তাহ আগে টইটং খালে দুটি পৃথক মাটির বাঁধ তৈরি করা হয়। একটি নাপিতখালী অংশে টইটং খালের উপর ও আরেকটি বাঁধ নির্মিত হয়েছে টইটং খালে। এ বাঁধটির অবস্থান টইটং বাজারের পূর্বদিকে কাছারীপাহাড় এলাকায়। পানি ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নাপিতখালীর মাটির বাঁধটির তৈরী করতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন।

খবর নিয়ে জানা যায়, টইটংয়ের কাছারীপাহাড় এলাকায় নির্মিত বাঁধটির নির্মাণ করছে পেকুয়ার এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের আয় দিয়ে। ওই ওয়াকফের অফিসিয়াল মোতোয়াল্লী পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা।

ইউএনও’র কার্যকারক হিসেবে কাছারীপাহাড়ের বাঁধ নির্মাণের তদারকি করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী নুরুন্নবী। অপরদিকে নাপিতখালী অংশে নির্মিত বড় পরিসরের মাটির বাঁধ নির্মাণ কাজের তদারকি করেন টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।

সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে, টইটং খালের প্রবাহমান অংশে দুটি বাঁধের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে।

এরশাদ আলী ওয়াকফের বেতনভুক্ত কর্মচারী অফিসিয়াল মোতোয়াল্লীর নিযুক্ত প্রতিনিধি নুরুন্নবী বলেন, টইটং খালে এ মৌসুমে দুটি মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। একটি বাঁধের ব্যয় মেটানো হয়েছে এরশাদ আলী ওয়াকফের অর্থায়ন থেকে। ইউএনও স্যার এ প্রতিষ্ঠানে মোতোওয়াল্লী। তিনি কৃষি উৎপাদন ও কৃষকদের উন্নতির জন্য কাজ করেন। তার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজকে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। তিনি সব সময় অসহায় ও গরীবের পাশে থাকেন। সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এ বাঁধটির ফলে ওয়াকফের অনেক জমি ছাড়াও টইটংয়ের উত্তর-পূর্ব অংশের বহু জমিতে বাড়বে আবাদ।

টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আমার ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী বারবাকিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জমিতে বুরো চাষ নিশ্চিত করার জন্য টইটং খালে মাটির বাঁধ তৈরী করা হয়। এমপি মহোদয় অর্থের যোগান দিয়েছেন। ফসল উৎপাদন বাড়াতে এ কাজটি করা হয়েছে।

বারবাকিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এ,এইচ,এম বদিউল আলম বলেন, আসলে এটির সুফল পেকুয়ার কয়েক হাজার কৃষক পাবে। উপসহকারী কৃষি অফিসার টইটংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোকাদ্দেস মো. রাসেল জানান, রাবার ড্যামের আওতায় প্রায় ২৫০০ হেক্টর আবাদি জমি আছে। এ বছর চাষ হবে কিনা অনিশ্চয়তা ছিল। মাটির বাঁধটি সঠিক সময়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি বুরো চাষের আওতায় আসবে। স্থানীয়রা জানান, টইটং খালে দুটি বাঁধ তৈরী হওয়ায় টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে বাড়বে কৃষি উৎপাদন। একদিকে বুরো চাষের জমির আওতা বৃদ্ধি পাবে। শীতকালীন শাক সবজি উৎপাদন বাড়বে প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে। বুরো চাষ ও শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হবে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এরশাদ আলী ওয়াকফের অর্থায়নে নির্মিত মাটির বাঁধের সুফল পাবে টইটংয়ের উত্তর-পূর্ব অংশের জনগন। কাছারীপাহাড়, গুদিকাটা, আলিগ্যাকাটা, ফজুরমোড়া, ওয়াজখাতুপাড়া, দক্ষিন দিকে বাজারপাড়াসহ জালিয়ারচাংয়ের বিলে বাড়বে বুরো ধানের চাষ।

পেকুয়ার কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় জানান, আসলে নাপিতখালী অংশের মাটির বাঁধটির উন্নয়ন ব্যয় কিভাবে মেটানো হবে সেটি এমপি স্যার এবং জনপ্রতিনিধিরা জানবেন। কারিগরি ক্রটির কারণে টইটং খালে রাবার ড্যামটি ছিদ্র হয়ে গেছে। আমরা অনিশ্চিত ছিলাম। আসলে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি হচ্ছে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। আমি এ টুকু বলবো এর প্রতিফলন হয়েছে পেকুয়ায়। আড়াই হাজার হেক্টর জমি বুরো চাষের আওতায় এবং শাক সবজি উৎপাদন হবে আরো ৩শ একর। সবমিলিয়ে ৩ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি জমিতে সবুজের সমারোহ তৈরী হবে।

এ বিষয়ে পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, কৃষকের অনিশ্চয়তা দূরীভূত হয়েছে। টইটং খালে দুটি মাটির বাঁধ তৈরী হয়েছে। উপরের বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে এরশাদ আলী ওয়াকফের অর্থায়ন থেকে। তিনি আরো বলেন, পৃথক অর্থায়ন থেকে দুটি বাঁধ নির্মাণ ব্যয় মেটানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, চাষ, পেকুয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন