আপত্তিকর অভিযোগে বান্দরবান খ্রীস্টান মিশনারীর ৬৫ ছাত্রীর হোস্টেল ত্যাগ

fatema rani church

জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান:

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ফাতিমা রাণী ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃক পরিচালিত খ্রীষ্টান মিশনারীর ৬৫ ছাত্রীর আকস্মিক হোস্টেল ত্যাগের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে স্থানীয় অনেকের মতে এই সংখ্যা ৭১ জন। তবে চার্চ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকে চার্চ হোস্টেলের রেজিস্টার দেখতে না দেয়ায় এ সংখ্যা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সূত্র মতে, চলে যাওয়া কযেকজন ছাত্রীকে চার্চ কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে ফেরত নিয়ে এসেছে। তবে এখনও ৬৫ ছাত্রী নিখোঁজ। ছাত্রীরা সবাই উপজাতি জনগোষ্ঠীর ও দরিদ্র। বিনা খরচে শিক্ষা ও থাকা খাওয়ার কথা বলে তাদের এখানে আনা হয়েছে।

গত ১৬ মার্চ সকাল সাড়ে চারটায় হাতমুখ ধোয়ার অযুহাতে ৬৫ ছাত্রী সাঙ্গু নদীতে গেলে তারা আর হোস্টেলে ফেরত আসেনি। এ ঘটনা বান্দরবানে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কি কারণে তারা হোস্টেল ত্যাগ করেছে তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো সূত্র।  ঘটনাটি বেশ কয়েকদিন আগে ঘটলেও চার্চ কর্তৃপক্ষ নানা কৌশলে তা ধামাচাপাদিতে সক্ষম হয়।

চার্চ এলাকার বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ এ হোস্টেলটির ছাত্রীদের উপর বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। ফাতিমা রাণী চার্চের ফাদার এডমন পল পুরোহিত কর্তৃক হোস্টেলটিতে শিক্ষকতা করেন ব্রাদার প্রত্যয় পল ত্রিপুরা, সিলভেসটারসহ অনেকে। তাছাড়া চার্চটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। যার ফলে সেখানে কোন অনৈতিক বা অসামাজিক কর্মকান্ড ঘটলেও তা লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় হোষ্টেল ছাত্রী এ প্রতিবেদককে জানান, ফাতিমা রাণী ক্যাথলিক চার্চের ফাদার এবং শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে হোস্টেলের ছাত্রীদের অসামাজিক কাজে বাধ্য করেন। অন্যথায় তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তাছাড়া হোস্টেলে খাবার, সেবাসহ অন্যান্য বিষয়েও তারা অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা হোস্টেল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করতে গেলে চার্চ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকে নূনতম সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাসংস্থার একাধিক সূত্র। তারা জানান, এই চার্চের হোস্টেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা আপত্তিকর অভিযোগের কথা শোনা গেছে। তবে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখায় বিষয়গুলো কখনোই তদন্ত করে বের করা সম্ভব হয়নি।

ফাতিমা রাণী ক্যাথলিক চার্চের ফাদার এডমন পল এর সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, আমরা এ ঘটনার ব্যাপারে শুনলেও এখনো পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বান্দরবান সেনাবাহিনীর জিএসটু মেজর মাহবুব মোর্শেদ পিএসসি, ইবি এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দূঃখজনক। তবে এ ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে. এম তারিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এ বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে হোষ্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, হোষ্টেল ত্যাগ করা ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের নিয়ে চার্চ প্রাঙ্গনে আগামী ২৬ মার্চ চার্চের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র চার্চ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “আপত্তিকর অভিযোগে বান্দরবান খ্রীস্টান মিশনারীর ৬৫ ছাত্রীর হোস্টেল ত্যাগ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন