গোলাগুলি-মর্টারশেল আতঙ্কে সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ, নিরাপদ আশ্রয়ে ৬শ শ্রমিক

fec-image

বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে বেশ কিছু দিন ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। ফলে ঘুমধুম সীমান্ত সড়কে কর্মরত ৬শ শ্রমিক গোলাগুলির ও মর্টারশেল নিক্ষেপের আতঙ্কে কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

একাধিক শ্রমিক পার্বত্যনিউজের এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে জানান, এই দিয়ে শ্রমিকরা দু’দফা কাজ বন্ধ রাখে। প্রথম দফা গত ২৫ দিন আগে আর দ্বিতীয় দফা বুধবার কাজ বন্ধ করে তারা। তবে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোন কথা বলেনি। শ্রমিকদের অন্যতম সিরাজুল, রফিক, শহীদুল্লাহ ও লাবে তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তারা দীর্ঘ দিন এ সড়কে কাজ করছেন। মাসের পর মাস কাজ করলেও হঠাৎ বার্মা বাহিনী তথা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভারী ভারী অস্ত্রের গোলাগুলি ও মর্টারশেলের আওয়াজ তাদেরকে আতঙ্কিত করে। হেলিকপ্টার ঘোরে তাদের মাথার উপর। গোলাও ছুঁড়ে এ হেলিকপ্টার থেকে।

তারা মনে করেন, যে কোন সময় তাদের উপর গুলি বা মর্টারশেল এসে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে তারা দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ দিন আগে তারা সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে চলে এসেছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের তুমরু এলাকার একাধিক শ্রমিক পার্বত্যনিউজের এ প্রতিবেদককে জানান, বুধবার ( ৩১ আগস্ট) তাদেরকে কাজে ফিরে যেতে বলেন তাদের কতৃপক্ষ। আর তারাও ভয়ে কাতর। যদি কোনভাবে মর্টারশেল তাদের গায়ে পড়ে তা হলে বড় বিপদ। তাই তারাও ভেবেছেন কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে থাকার। তাই ফিরে এসেছেন নিরাপদে। গোলাগুলি বন্ধ হলে আবারো কাজে ফিরবেন তারা।

অপর একটি সূত্র পার্বত্যনিউজকে জানান, ঘুমধুমের তুমরু, রেজু আমতলী, বাইশফাঁড়ি, তুইঙ্গাঝিরি, গর্জনবুনিয়া ও রেজুপাড়াসহ ঘুমধুমের ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ ১ মাস ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের বিদ্রোহী আরকান আর্মিদের দমনে গোলাবর্ষণ করছে। হেলিকপ্টার নিয়েও এ গোলাবর্ষণ করে। একই সাথে মর্টালশেল ও নিক্ষেপ করে তারা। যার সংখ্যা ২০ থেকে ৩০টি অধিক হতে পারে। এর মধ্যে ২টি মর্টারশেল উত্তর তুমরু গ্রামের মসজিদের আঙ্গিনা ও বসতবাড়িতে পড়ে।

সূত্র আরো জানান, সীমান্তের এ পয়েন্টে হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণের সাথে বিদ্রোহীদের আস্তানা শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শনাক্তের পর সে দেশের বিদ্রোহী আরকান বাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করতে পারে বলে জানান তারা। কিন্তু আস্তানার সন্ধান না পেয়ে তারা পুরো ১৬ কিলোমিটার এলাকায় গোলাবর্ষণ করতে থাকে। আর মর্টারশেল নিক্ষেপ করে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যা অন্ধকারে ঢিল ছোড়া মতো অবস্থার সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পার্বত্যনিউজকে বলেন, তার ই ধারারবাহিকতায় শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী দফা দফা মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গোলাগুলি করে দীর্ঘ ১ ঘণ্টা

ঘুমধুম ইউপি মেম্বার আবুল কালাম পার্বত্যনিউজকে জানান, গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত এলাকার সকল কাজকর্ম বন্ধ। কারণ শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা রিক্স মনে করেছে। কেননা কখন এসে তাদের হতাহত করে এ ভয়ে। আর মালিক পক্ষও রিক্স নিচ্ছে না। এর আগে ও গোলাগুলির শব্দে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকায় বসবাসরতদের মাঝে আতঙ্ক বেড়ে যাওয়া মানুষ রাতে অন্যত্র আশ্রয় নেন। এছাড়া এ সীমান্ত এলাকায় কয়েক দফা হেলিকপ্টারে করে গোলাবষর্ণ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

তিনি আরো জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে জেড বিমানের আদলে আর ড্রোনের আদলেও বিমান উড়তে তার এলাকার মানুষ দেখেছেন বলেও তিনি দাবি করেন। মিয়ানমারের তুমরু সীমান্ত রক্ষীর ঘাঁটি থেকে বৃহস্পতিবার কয়েক দফা মর্টারশেল এসে পড়ে ৭ কিলোমিটার দূরের বাইশফাঁড়ি-আমতলী সীমান্ত পয়েন্টে। যার ফলে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে।

এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ পার্বত্যনিউজকে বলেন, রেজু আমতলী ফাত্রাঝিরি বাইশফাঁড়ি সীমান্তে নতুন আঙ্গিকে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন তার এলাকার মানুষ।

তিনি নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিন ৩৯ নম্বর ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকাসহ ঘুমধুম সীমান্তের সর্বত্র মিয়ানমার বাহিনী সীমান্ত ঘেঁষা আরকান বাহিনীর উপর হামলা চালায়। তবে তিনি হতাহতের কোন সংবাদ জানাতে পারেনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া অনেক গোলা বাংলাদেশ সীমানা কাছাকাছি বা বাংলাদেশ সীমানার ভেতরে পড়েছে। আর গোলাগুলির ঘটনা শুরুর পর থেকে সীমান্ত সড়কের শ্রমিক ও তার নিজের বাগানে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে নিরাপদে অবস্থান করছে। গোলাগুলি বন্ধ হলে হয়তো পুনরায় কাজে ফিরবেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আতঙ্ক, মর্টারশেল, সীমান্ত সড়ক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন