নারী নির্যাতন মামলায় পরোয়ানা

দুই সপ্তাহ পার হলেও গ্রেফতার হয়নি আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু চাকমা

fec-image

স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই সপ্তাহ পার হলেও গ্রেফতার হয়নি কুড়িগ্রামের সেই সাংবাদিক পেটানো ডিসি সুলতানা পারভীনের সহযোগী আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। গত ১ নভেম্বর খাগড়াছড়ির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মো. আবু তাহের এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু পুলিশ বলছে তারা এখনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পাননি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। দফায় দফায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। মেঝেতে ফেলে তার বুকে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে কিল ঘুষি লাথি মারেন রিন্টু। তার গলা টিপে ধরেন। এমনকি রিন্টুর আঘাত থেকে বাদ যায়নি নিজের ছয় বছরের শিশুকন্যাও। এ রকম রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা উঠে আসে মামলার বাদী চন্দ্রিকা চাকমার আর্জিতে। শিশু কন্যার জবানীতেও পিতার নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা আসে।

চন্দ্রিকা চাকমা তার আর্জিতে বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ মাটিরাঙ্গা ডিগ্রী কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার আমতলী গ্রামের অক্ষয়মণি চাকমার ছেলে রিন্টু বিকাশ চাকমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে যৌতুক না দেওয়ায় পারিবারিকভাবে তাকে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ১৮ জুলাই তাদের ঘরে কন্যা সন্তান আসে। রিন্টু বিকাশ চাকমা দীর্ঘদিন বেকার থাকায় শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের যৌতুক নেন। বিসিএস ভাইভার আগে চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা চাইলে দুই লাখ টাকা দেন শ্বশুর ও স্বজনরা। কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা ও ওএসডি থেকে খালাস পেতে পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এ সব বিষয়ে চন্দ্রিকা চাকমা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। সামাজিকভাবে সমঝোতার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা দায়ের করেন রিন্টুর স্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিয়েও করেছেন। এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে শিশু কন্যাসহ ৯ সাক্ষীর বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া খাগড়াছড়ি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলম।

নির্যাতনের স্বীকার ভিকটিমের আইনজীবি এডভোকেট সৌরভ ত্রিপুরা জানান, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে আদালতের জারিকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানা তার কর্মস্থল ও গ্রামের বাড়ি গুইমারার আমতলীতেও পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান (১৮ নভেম্বর) জানান, তিনি এ ধরণের কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা পাননি।

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে গত ১৩ মার্চ রাতের আঁধারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে ‘বিবস্ত্র’ করে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রমের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সে সময় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতারি পরোয়ানা, ম্যাজিস্ট্রেট, রিন্টু চাকমা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন