চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা, হুমকিতে বাদি গৃহবধু

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম জিকুর বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী নারীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জমিদারপাড়া গ্রামের দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধু বাদি হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে এ মামলাটি দায়ের করে। আদালতের বিচারক বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে অভিযোগটি তদন্ত করছেন থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মামলার বাদি ওই নারী অভিযোগ করেছেন, মামলাটি দায়ের করার পর থেকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য। এ অবস্থার কারনে তিনি বর্তমানে চরম আতঙ্কে ভুগছেন। থানা থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নোটিশ দিয়ে তাকে ঢেকে পাঠালেও চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিদের হুমকির মুখে ভয়ে তিনি থানায় উপস্থিত হতে পারছেনা। এ অবস্থার সুযোগে বিবাদি ওই ইউপি চেয়ারম্যান নানা উপায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

মামলার বাদি উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের জমিদারপাড়া গ্রামের আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী ভুক্তভোগী ওই নারী দাবি করেছেন, গত কোরবানির ঈদে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির দুটি গরু বিক্রি করেন। ওই টাকা তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্বামী আবদুস শুক্কুর নানাভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে ওই টাকা স্বামীকে না দেয়ায় ঈদের কয়েকদিন আগে তাকে স্বামী ব্যাপক মারধর করেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধু বলেন, গরু বিক্রির টাকার জন্য স্বামী তাকে মারধর করেছে অভিযোগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দেন। ওইসময় পরিষদের অপরাপর প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন সকলের উপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে গরু বিক্রির ওই ৭৬ হাজার টাকা জমা রাখেন যাতে ওই টাকা স্বামী আর নিতে না পারে।

মামলার বাদি ওই নারী দাবি করেন, চেয়ারম্যান বিচারে না ডাকার কারনে কোরবানির ঈদের কিছুদিন পর পরিষদে যান তিনি। ওইদিন চেয়ারম্যান কক্সবাজারে ছিলেন। তবে ফোনে তার সাথে কথা বললে তিনি তাড়াতাড়ি ফিরছেন জানিয়ে তাকে পরিষদের এক নারী চৌকিদারের বাড়িতে অবস্থান করতে বলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বাড়িতে পৌঁছে খবর দেন ওই নারী চৌকিদারকে। পরে তার কথা মতো নারী চৌকিদার মামলার বাদি গৃহবধুকে নিয়ে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। তাকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে ওই নারী চৌকিদার তার বাড়িতে ফিরে যান।

ভুক্তভোগী গৃহবধু মুঠোফোনে দাবি করেন, বাড়িতে ঢুকা মাত্র চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু তাকে বসতে দেন। ওইসময় বাড়িতে চেয়ারম্যানের পরিবারের কোন সদস্য সেখানে ছিলনা। কারন আগে থেকেই তার স্ত্রী ও সন্তানরা চট্টগ্রামে থাকে। ওই গৃহবধু বাড়িতে ঢুকে চেয়ারম্যানের কাছে বিচারের কথা ও জমা নেয়া টাকা ফেরত চাইলে চেয়ারম্যান সব দেয়া হবে বলে তাকে কথা দেন। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান বাড়ির ভেতর সব বিদ্যুতের বাতি নিভিয়ে দেন। ভুক্তভোগী দাবি করেছেন, ওইসময় চেয়ারম্যান জোরপুর্বক তাকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ঘটনার এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারলেও ধস্তাধস্তির কারনে তার পরিধানে থাকা কাপড় চোপড় ছিড়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি দরজা খুলে পালিয়ে কোন মতে রক্ষা পান। এ ঘটনার পর থেকে তার স্বামী এখন বাড়িতে আসছেনা। তার তো দূরের কথা, দুইটি সন্তানেরও কোন খোঁজ খবর নিচ্ছেনা ভুক্তভোগীর স্বামী। এতে তিনি অনেকটা নিরুপায় হয়ে ঘটনার বিশদ বিবরণ তুলে ধরে আদালতের কাছে অবশেষে নালিশী মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, মামলার আর্জিতে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে নোটিশ দেয়া হলে বিবাদি ইউপি চেয়ারম্যান থানায় আসেন, কিন্তু বাদি ওই মহিলা থানায় উপস্থিত হননি, এমনকি তার মামলার কোন স্বাক্ষীও আসেনি। তবে হুমকি দেয়ার বা তাকে থানায় আসতে না দেয়ার ঘটনাটি আমাকে জানাইনি। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বাদি -বিবাদি পক্ষের বক্তব্য লিখিত আকারে শুনে আদালতের কাছে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন