চকরিয়ায় টানা বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

মৎস্যখাতে প্রায় ৭৯ কোটি টাকার ক্ষতি, ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের ও পুকুর

fec-image

★ ৯ হাজার ৬০৪ জন মৎস্য চাষি চরম ক্ষতিগ্রস্ত ★ বন্যায় তলিয়ে গেছে ১ হাজার ৯৬২টি চিংড়ি ঘের ★৭ হাজার ৬৪২টি পুকুর ও দিঘী ভেসে গেছে

এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় তলিয়ে যায় পুরো উপজেলার জনপদ। এতে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ।

বন্যার পানিতে ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সবচেয়ে মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা অতীতের সব রের্কড ভেঙে গেছে এবারের বন্যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ি ঘের চাষিরা। এতে বন্যায় চকরিয়া উপজেলায় মৎস্য খাতে অন্তত ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে চাষিদের হিসাবে এই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ২শত কোটি টাকার চেয়ে বেশি।

চকরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলায় ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ৯শত ৬২টি চিংড়ি ঘেরের চাষিদের ক্ষতি হয়েছে ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যাহার আয়তন ১০ হাজার ৭৯২ হেক্টর। তাছাড়া ৭ হাজার ৬ শত ৪২ টি পুকুর ও দিঘির মাছ বন্যায় তলিয়ে গেছে। এতে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৫ লাখ টাকা। যাহার আয়তন ৬১২.২৪ হেক্টর। এছাড়াও চিংড়ি ঘের, পুকুর ও দিঘীসহ নানা অবকাঠামো বাবদে ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৬০৪ জন চাষি।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার পুরো চিংড়ি জোন বন্যায় তছনছ করে দিয়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে নিয়ে গেছে প্রচুর চিংড়ি ঘের, পুকুর ও দিঘীর মাছ। টানা ভারি বর্ষণ ও সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বেশির ভাগ চিংড়ি জোন এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বন্যা প্লাবিত এলাকায় সবকিছু ভেসে গেছে। এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য ঘের চাষিরা। বন্যায় চিংড়ি ঘের, ব্যক্তি মালিকানাধীন মৎস্য খামারের ব্যাপক এই ক্ষয়ক্ষতি কি ভাবে তারা পুষিয়ে উঠবেন তা নিয়ে চরম দু:চিন্তায় পড়েছেন। স্মরণকালের ভয়াবহ এবারের বন্যায় অতীতের সব রের্কড ভেঙে গেছে বলে দাবী করেছেন। এতে মৎস্য চাষিদের অন্তত দুইশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানান।

উপজেলার কোরালখালী এলাকার চিংড়ি ঘের চাষি নাজেম উদ্দিন বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যার পানিতে ৭টি মৎস্যঘেরের মাছসহ সবকিছু তলিয়ে যায়। এতে অন্তত ২ কোটি টাকার ওপরে মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও চিংড়ি ঘেরের বাঁধ, ঘেরের বাসাসহ নানা জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কি ভাবে পুষিয়ে উঠতে পারবো জানিনা। ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা ঋন নেয়া হয়েছে।

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের বাণিজ্যিক খামার ও পুকুর চাষি এমডি আলাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবার বন্যায় তাঁর ব্যাপক ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে তাঁর চাষাকৃত ১৩টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। এতে অন্তত ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়াও খামারের বিভিন্ন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি চরম আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও নি:স্ব হয়ে গেছেন বলে দাবী করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.ফারহান তাজিম বলেন, ভয়াবহ বন্যায় মৎস্যখাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এবারের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ১হাজার ৯৬২টি চিংড়ি ঘের, ৭ হাজার ৬৪২ টি পুকুর ও দিঘী বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৯ হাজার ৬০৪ জন চাষি চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব মৎস্য চাষিদের অন্তত ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যা আয়তনের পরিমাণ ১১ হাজার ৪০৪.২৭ হেক্টর বা ২৮১৬৮ একর বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষতি, চকরিয়া, চিংড়ি ঘের
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন