চকরিয়ায় ঘূর্ণিঝড় “হামুনের” তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড জনপদ: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

fec-image

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার জনপদ কোন দুর্যোগে এ ধরণের ক্ষতবিক্ষত ও লন্ডভন্ড হয়নি। ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অন্তত ২৫০টি অধিক বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও মাঠের ফসল, সবজিক্ষেত, বিদ্যুৎতের খুটি, ট্রান্সফারমার ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে গাছচাপায় বদরখালী ইউনিয়নের টুটিয়াখালী গ্রামের জাফর আলমের ছেলে আসকর আলী (৪২) নামে এক যুবকের প্রাণহানিও ঘটে।

জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে অন্তত ১০-১২টি ইউনিয়নে এখনো বিদ্যুৎ বিহীন। এসব ইউনিয়নের জনগণ কখন বিদ্যুৎতের দেখা পাবে তা এখনো নিশ্চিত না। বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে অনেক তথ্য এখনো অজানা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের চলাচল রাস্তায় গাছপড়ে থাকায় বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ।

তবে প্রশাসনের প্রচেষ্টায় যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। চকরিয়া সদর থেকে ঢাকা ও কক্সবাজার গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সাধারণ মানুষ আশা করছে কয়েক দিনের ভেতরেই পুরো উপজেলার সাথে ইউনিয়নের যোগাযোগ আস্তে আস্তে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এমনটা প্রত্যাশা। মঙ্গলবার রাতে হামুনের প্রভাবে উপজেলার কাকারা-মানিকপুর সড়কের একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফলে বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাত থেকে ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, হারবাং ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ভারি বৃষ্টির কারণে হারবাং ছড়াখালে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোতের তোড়ে ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রাখাইন পাড়া সড়ক ও গোদারপাড়া সড়ক। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

উপজেলার কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১০টি বসতবাড়ি একেবারে ভেঙে গেছে। এছাড়া বেশিরভাগ আগাম সবজি ক্ষেতের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর জানান, তার ইউনিয়নে বড়-বড় গাছ ভেঙে পড়ায় ১৫টি বাড়ি একেবারে ভেঙে গেছে। এছাড়া অর্ধ-শতাধিক বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ বলেন, আমার এলাকার সড়কগুলোতে প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে। এছাড়াও দুটি সড়ক পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়ে যায়।

বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় বাঁশ ও টিনের ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে। গাছপালা ভেঙে যাওয়ায় বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগও সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবে তার এলাকার চিত্র খুবই ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন। এখনো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর তালিকা নিরূপণ করা হয়নি।

চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত সরকার জানান, সবকটি ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ব্রিজটির বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন করে বিকল্প ব্যবস্থায় যোগাযোগ চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। খালে অতিরিক্ত পানির স্রোতে ব্রিজের কয়েকটি পিলারের মাটি সরে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। এছাড়াও যে সব এলাকায় রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে ১১ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের পরিবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি জানান ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৫২৮০জন, ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা প্রায় ১২০০টি, সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ২৫০টির কাছাকাছি হবে। ঘূর্ণিঝড়ে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১জন।

এদিকে, উপজেলা প্রশাসন থেকে ৪৪০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানায়।

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুতের চকরিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাদিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় সংযোগ দিতে পারছি না। আমাদের লাইনম্যানরা কাজ করছেন। জোনাল অফিসের আওতাধীন এলাকায় ৩৩ কেবি লাইনের শতাধিক খুঁটি ভেঙে গেছে ও ২০টি বিদ্যুৎতের ট্রান্সফারমার নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য চকরিয়া ৬টি টিকাদারের নেতৃত্বে জোনাল অফিসের ৯৫ জন আলোর গেরিলা বাহিনীর সমন্বয়ে বিদ্যুৎ লাইন পূর্ণ নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎতের খুটি সম্পূর্ণ মেরামত করে লাইন দিতে অন্তত আরো চারদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন