চকরিয়ায় ১৮ ইউপি ও পৌরসভায় ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে চরম ভোগান্তি

fec-image

★ নাম সংশোধন করতে দ্বিগুণ দুর্ভোগ ★ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ ★ টাকা খরচ করেও ভোগান্তি ছাড়া সনদ মেলে না ★ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্মসনদ দেয়ার আগে এনালগ পদ্ধতিতে সহজেই সনদ সংগ্রহ করা যেত।

জন্মনিবন্ধন সনদ সবকিছুতেই আবশ্যক করা হয়েছে। কিন্তু জন্মসনদ করতে গেলেই পদে পদে বিপত্তি ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ডিজিটাল প্রশাসনে সব আবেদন অনলাইনে করতে হয়। অনলাইনে আবেদন থেকে শুরু করে সনদ পাওয়া পর্যন্ত নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবাগ্রহীতার। কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। নাম সংশোধন করতে গেলে দ্বিগুণ দুর্ভোগে পড়তে হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ। কখনো কখনো টাকা খরচ করেও ভোগান্তি ছাড়া সনদ মেলে না। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্মসনদ দেয়ার আগে এনালগ পদ্ধতিতে অতি সহজেই সনদ সংগ্রহ করা যেত। নামমাত্র সরকারি ফি দিয়ে এসব সেবা দেওয়ার বিধান থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , কক্সবাজার জেলার বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়া। এ উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। এসব ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নতুন করে জন্মসনদ পেতে সেবাগ্রহীতার ২ সপ্তাহ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আবার জন্মনিবন্ধন সনদ হাতে পেলে দেখা যায় সনদে বিভিন্ন ধরনের নামের মধ্যে ভুল। সনদের এসব ভুল সংশোধন করতে ভোগান্তি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন করতে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। সরকারি নিয়মানুযায়ী, শূন্য থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা মূল্যে নিবন্ধন করা যায়। ৪৫ দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের ২৫ টাকা, তার বেশি বয়স্কদের ৫০ টাকা ফি দিতে হয়। নাম ও ঠিকানা সংশোধন করতে ৫০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। সরেজমিনে জানা যায, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী, বরইতলী ও বদরখালীসহ ৬টি ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে, বেলা ২টার পরও প্রতিটি ইউপি কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের ভীড় লেগে আছে। তাঁদের বেশিরভাগ সেবাগ্রহীতার জন্ম নিবন্ধন ও ভুল সংশোধনের জন্য তারা পরিষদে এসেছেন।

ফাঁসিয়াখালীর দিগরপানখালী গ্রামের রিদুয়ানুল হক বলেন, ‘তাঁর নিজের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ করতে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে অনলাইনে আবেদন করেন। পরে ফাঁসিয়াখালী ইউপি কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আ.ক.ম হুমায়ন কবির কাছে যান। তিনি কাগজপত্র রেখে কয়েকদিন পরে যেতে বলেন। এক সপ্তাহ পর ওই কর্মকর্তার কাছে তিনি জানান, কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। এরপর ৩ মাস ইউপি কার্যালয়ের ঘুরতে ঘুরতে পর চেয়ারম্যান উদ্যোগে নিয়ে জানুয়ারিতে দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ করে দেন।’

রাজারবিল গ্রামের রাবেকা বেগম বলেন, ‘এক ছেলে ও মেয়ের জন্মনিবন্ধন করতে গেছেন তিনি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আ.ক.ম হুমায়ন কবির কাগজপত্রের অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি জন্মনিবন্ধন করতে ৩০০ টাকা দাবি করেন। ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাঁর আগের দুজন সেবাগ্রহীতার কাছে বাড়তি টাকা নিয়েছেন। একজন থেকে ৩০০ ও অন্যজন থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছেন। সেবাগ্রহীতার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। শুনেছি, তিনি নিয়মিত অফিসেও যান না।’

বরইতলী ইউপির শান্তিবাজার এলাকার ইয়াছিন আফরিন বলেন, ‘কলেজ থেকে তাঁর ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ চেয়েছে। এতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর আগে বাবা ও মায়ের নিবন্ধনের আবেদন করতে হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ঘুরে সনদ হাতে পাওয়ার পর দেখা যায়, মেয়ের নামের বানানে ভুল। তা সংশোধন করতে সময়ে লেগেছে আরও এক মাস।’

ফাঁসিয়াখালী ইউপি কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আ ক ম হুমায়ন কবির কাছে জানতে চাইলে তিনি কারো কাছ অতিরিক্ত টাকা নেয় না দাবি করে তড়িঘড়ি করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমাকে কেউ বলেনি। কোন সেবাপ্রাপ্তি সেবা পেতে অসুবিধা হলে আমাকে জানালে আমি নিজেই করে দিই। প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিষয়ে অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাবো।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়ে, সেজন্য সকল ইউপি কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিবদের) দাপ্তরিক মোতাবেক জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়া, জন্মনিবন্ধন সনদ, পৌরসভা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন