চীনা মানচিত্রে অরুণাচল ও আকসাই চীন, ক্ষুদ্ধ ভারত

fec-image

আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের ‌‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’-এর সংস্করণ প্রকাশ করেছে চীন। আর সেই মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে চীনা ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও তাইওয়ান ও বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরও আছে চীনা ভূখণ্ডের তালিকায়।

সোমবার (২৮ আগস্ট) চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ম্যাপ প্রকাশ করেছে। এমন কাণ্ডে কিছুটা ক্ষিপ্ত দিল্লি।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ‘এক্স’ হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) মারফত এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, চীনের সীমারেখা ও আন্তর্জাতিক নীতি মেনেই এই মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে।

সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় নরেন্দ্র মোদি ও সি চিন পিংয়ের বৈঠকের পরই নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করল চীন।

আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি–২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভারতে আসার কথা। তার আগেই এই মানচিত্র প্রকাশ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ গত ছয় দশকের। ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর সম্পর্কের অবনতি লক্ষ করা যায়। ভারত সরকারিভাবে স্বীকার না করলেও বিরোধীদের অভিযোগ, ওই সময় লাদাখের অন্তত ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনা ফৌজ গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর ২০২০ সালের সংঘর্ষ পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে ভারত বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও চীন এখনো তা মানেনি।

সেই বরফ গলাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্রিকস’ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদি–সি ঘরোয়া বৈঠক হয়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছিলেন, দুই নেতা লাদাখ সমস্যার সমাধানে সহমত হয়েছেন। ওই বৈঠকের পর পরই চীনের এই ম্যাপ প্রকাশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সহায়ক নয় বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা।

অরুণাচল প্রদেশকে চীন দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে। ভারতের মতে, ওই প্রদেশ তাদের ছিল, আছে ও থাকবে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে আকসাই চীন তারা দখল করেছিল বলে দাবি জানিয়ে আসছে চীন। ভারত সেই দাবি মানতে নারাজ।

লক্ষণীয়, চলতি বছরের মে মাসে অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে দুই দিন ধরে জি-২০ গোষ্ঠীর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে চীন গরহাজির ছিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ওই বৈঠকের পর পরই চীন অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম তাদের ভাষায় রাখে। এমন নামকরণ তারা ২০১৭ ও ২০২১ সালেও করেছিল। ভারত তখনো আপত্তি জানিয়েছিল।

চলতি বছর চীনা ভাষায় এলাকার নামকরণ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছিলেন, নামকরণ যাই করা হোক, তাতে অরুণাচল প্রদেশের বাস্তবতায় হেরফের ঘটে না। এবার চীন গোটা অরুণাচল প্রদেশকেই তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করল সি–মোদি বৈঠকের রেশ কাটতে না কাটতেই।

কংগ্রেসের পরামর্শ
বিজেপি সরকার এখনো চীনের নতুন মানচিত্র প্রকাশের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কংগ্রেস সরকারে উদ্দেশে বলেছে, সি চিন পিংকে যেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো না হয়। কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য ও সদ্যগঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মণীশ তিওয়ারি আজ মঙ্গলবার এই দাবি জানিয়ে বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, সীমান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে চীনের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে। তারা বেআইনিভাবে ভারতের জমি দখল করে রেখেছে।

মণীশ তিওয়ারি বলেন, সি চিন পিংকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হলে ভারতের আত্মসম্মানে ঘা লাগবে কি না, তা গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। লাদাখের ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি ওরা দখল করে রেখেছে। সেটা ছেড়ে চলে যাওয়া ওদের একমাত্র কর্তব্য।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন