চুক্তির উদ্দেশ্য কি তবে অস্ত্র কেড়ে নেওয়া: সন্তু

সন্তু লারমা

স্টাফ রিপোর্টার:

১৭ বছরেও পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রশাসন শক্তিশালী করা নিয়ে বৃহস্পতিবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার কার্যালয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে বিশেষ শাসন ব্যাবস্থার প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই সন্দেহের কথা জানান।

সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব অনেকগুলো প্রশ্ন ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। পাহাড়িদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য সরকার এই চুক্তি করেছিল কি না, সেটিও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।” আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরে এসে অস্ত্র সমর্পণ করে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী।

প্রায় দুই যুগ ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে শান্তি বাহিনীর সশস্ত্র সংঘাতে অনেক রক্তক্ষয়ের পর স্বাক্ষরিত এই চুক্তি পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার আশা জোগায়। তবে দেড় যুগেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আগামী ৩০ এপ্রিলের পর পাহাড়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা।

চুক্তির শর্তগুলো জনসংহতি সমিতি পুঙ্খানাপুঙ্খভাবে পালন করেছে, কিন্তু সরকার পালন করেনি বলে এই পাহাড়ি নেতার অভিযোগ; তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।অনুষ্ঠানের আলোচনায় উঠে আসে, পার্বত্য চুক্তির ৭১টি ধারার অধিকাংশ বাস্তবায়ন হলেও এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখনও সরকার প্রয়োগ করেনি।

জনসংহতি সমিতি বলে আসছে, চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়নি, জেলা পরিষদ ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের অবস্থান এখনও সাংঘর্ষিক, স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতাপরায়ণ নয়, ভূমি কমিশন কার্যকর হয়নি ইত্যাদি।

চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পুনরায় অস্ত্র হাতে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সন্তু লারমা বলেন, ১৭ বছর পর আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে- হয়ত আগের সেই পদ্ধতি আবার শুরু করার প্রয়োজন হতে পারে।” বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের এই চেয়ারম্যান মনে করেন, দেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ চর্চা না হলে শুধু পাহাড়িরা কেন, সমতলের বাসিন্দাদের নিপীড়ণের চিত্রও বদলাবে না। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে শাসন ব্যবস্থা এক ব্যক্তির হাতে। বর্তমান সরকারের মধ্যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল অনেকে আছেন, তবে এর সংখ্যা খুবই কম।”

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, সংসদে আদিবাসী বিষয়ক ককাসের সদস্য উষাতন তালুকদার, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে না, তবে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন জনসংখ্যা তাত্ত্বিক রাজনীতি চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরকম চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে পাহাড়িরা সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ অসাধারণ মডেল হতে পারত। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন