চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্ম সংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না: সন্তু লারমা

Rangamati B

স্টাফ রির্পোটার :

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে জুম্ম সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের স্বীকৃতি, অস্তিত্ব সংরক্ষণ এবং তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিকাশে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না করায় জুম্ম সংস্কৃতি বিকশিত হতে পারছে না। আজ জুম্ম সংস্কৃতি বিপর্যয়ের মুখে।

বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ১৪টি জুম্ম জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসব উপলক্ষে উদযাপন কমিটি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

সন্তু লারমা বলেন, জুম্ম জনগণের প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী নিজ নিজ ভাষায় উৎসবটি পালন করে থাকে। যেমন চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিয়ারা বিহু নামে পালন করে উৎসবটি।

সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। আমরা পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণ চরম হতাশাগ্রস্ত। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনও সেনাশাসন বিরাজ করছে। পার্বত্যাঞ্চলের বুকে চলছে ইউপিডিএফ নামধারীদের সশস্ত্র সন্ত্রাস। ফলে পার্বত্যাঞ্চলের পনের জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

সকাল ৯টায় রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু ২০১৪ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রাঙামাটি-২৯৯ আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. মানিক লাল দেওয়ান, প্রকৌশলী জগৎজ্যোতি চাকমা ও জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, রাঙামাটি বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনি চাকমা। এছাড়া জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গন থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে রাজবাড়ীর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। তিন দিনের অনুষ্ঠানমালায় রাঙামাটি স্টেডিয়ামে জুম্ম খেলাধূলা এবং বিকালে বয়োজৈষ্ঠদের সম্মননা, প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। রাঙামাটি স্টেডিয়ামে সকালে জুম্ম খেলাধূলা এবং বিকালে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে।

১২ এপ্রিল (শুক্রবার) ভোর সাড়ে ৬টায় রাজবন বিহার ঘাটে আনুষ্ঠানিভাবে ফুল ভাসানো এবং সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা অুনষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য পাহাড়িদের ঘরে ঘরে মহাসমারোহে আয়োজন করা হয় উৎসবটি। উৎসবটিকে সামনে রেখে পাহাড়ি এলাকায় আয়োজন করা হয় নানা বর্ণাঢ্য  কর্মসূচি।

আগামী ১৩ এপ্রিল আদিবাসী জুম্মদের ঘরে ঘরে শুরু হবে উৎসব। মুল উৎসব হবে ১৩ এপ্রিল। শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। এছাড়া ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন