জলকেলিতে বর্ণিল মারমা সম্প্রদায়

Bandarban pic-2, 15.4

স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মারমা তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠৈছে ‘সাংগ্রাই’ উৎসবে। শহরের পুরাতন রাজার মাঠ, রেইচাসহ জেলার পাহাড়ী পল্লীগুলোতে এ উৎসব শুরু হয়েছে। বর্ষবরণ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে ‘সাংগ্রাই’ উদযাপন করেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। অতীতের ব্যর্থতা আজ মুছে দিয়ে যায়, নতুনের অঙ্গীকার আর উদ্দীপনায়, ছুটেছি ছুটেছি সম্মুখে ছুটেছি সত্য সুন্দরের সম্ভাবনায় এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে।

উৎসবে বিশাল নৌকাতে জল ধরে রাখা হয়। এ পাত্র থেকে তরুণ-তরুণীরা এক অপরের প্রতি জল ছিটিয়ে দেয়। সাংগ্রাই উৎসবে জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা জীবনসঙ্গীকে বেছে নেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বৃহৎ নৃ-গোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। পুরনো বছরের গ্লানি মুছে ফেলতে জলকেলিতে মেতে উঠেছে মারমা সম্প্রদায়। শুরু হওয়া বর্ণিল এই উৎসব বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে।

বর্ষপঞ্জি সাকক্রয় অনুযায়ী ১৩৭৭ সনের বুধবার নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন। মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় ‘মাহা সাংগ্রাই পোয়ে’। বান্দরবান স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এ সময় ব্রিগেড কমান্ডার নকিব আহম্মেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার দেবদাশ ভট্টাচর্য্যসহ পাহাড়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

Bandarban pic-1, 15.4

এদিকে, জলকেলী উৎসবে মেতেছে বাঙালিরাও। সাংগ্রাই উৎসব উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক বান্দরবানে অবস্থান করছে। অনুষ্ঠানে রশি টানাটানি, মোরগের লড়াই, খেলার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মারমা শিল্পীগোষ্ঠী গান-নাচ পরিবেশনে মাতিয়ে রাখে উৎসব অঙ্গন। উৎসব ঘিরে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে রাতভর ঘরে ঘরে চলে পিঠা তৈরির ধুম।

সূত্র জানায়, ‘গৌতম বুদ্ধের সময় মহেন্দ্র নামে এক রাজা ছিলেন। রাজার রাজ্যে প্রতিবছর সংগঠিত অমঙ্গল কর্ম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহেন্দ্র গৌতম বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করলে বুদ্ধ রাজাকে মারমা পঞ্জির বছরের শেষ দিন মঙ্গল সূত্রের পানি পুরো রাজ্যে ছিটানোর উপদেশ দেন। বুদ্ধের উপদেশ অনুযায়ী রাজা কার্যক্রম সম্পন্ন করাই রাজ্যে কোনো অমঙ্গল কাজ হয় নি।’ এই অনুসারে মারমারা দীর্ঘকাল ধরে এই অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।

মারমা বর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনে বৌদ্ধ মূর্তিগুলো স্নান করানো হয়। তাদের বিশ্বাস, এই বুদ্ধমূর্তি ধোয়া পানিগুলোর সংস্পর্শে এসে সব পানি মঙ্গল সূত্রের পানির মতো পবিত্র হয়। এই পানি দিয়ে খেলায় মেতে উঠে মারমারা। বুধবার বিকেলে জেলা শহরের সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধমূর্তি স্নান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন