টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য
উপজেলা প্রতিনিধি, টেকনাফ :
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে সেবার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। সেবা কেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মীদের সেচ্চাচারিতায় রীতিমত সাধারণ জনসাধারণ অতীষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে করে সেবার মান জনগণের দৌঁড় গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার যে ভিশন তা রীতিমত উপেক্ষিত হচ্ছে। সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এই তথ্য সেবা কেন্দ্র দিয়েছেন, তা ইউনিয়নটির জনসাধারণের ক্ষেত্রে কিছুতেই হাসিল হচ্ছেনা। এখানে সেবাই নয় গলাকাটা মুল উদ্দেশ্য।
ইউনিয়ন পরিষদের ২য় তলায় অবস্থিত তথ্য সেবা কেন্দ্র যেন নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এখানকার এমন অবস্থা যেন কল্পনাই করা যায়না। মানুষের প্রয়োজনীয় যে কোন কিছু সঠিক সময়ে ডেলিভারী দেয়না। ঠিকমত ডেলিভারীতো পায়না উল্টো ২/৩ দিন ঘুরিয়ে ফিরিয়েও সরবারহ করেনা। এতে আবার নির্ধারিত ফিসের চাইতে ৪/৫ গুণ বেশী আদায় করে নিচ্ছে। এখানকার পরিচালক সাবুল কাদের যেন ইউপি চেয়ারম্যানের অনেক উপরে। সেই তথ্যসেবা কেন্দ্রে বসে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। পরিষদের টপ টু বটম তার কথায় চলে। তাঁর মাতব্বরীতে পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত শংকার মধ্যে থাকে। জনগণের সেবার মাধ্যম তথ্যসেবা কেন্দ্রকে অনেকটা নিজের ঘর হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে সে ইচ্ছামত যা খুশি তা করে বেড়াচ্ছে। পরিষদের কেউ ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। নিজের খেয়াল খুশি মত জনগণের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তথ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ করে সে বর্তমানে অনেক টাকার মালিক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধন কেবল ২০টাকায় সরবরাহ করার কথা থাকলেও সে কোন সময় কাউকে উক্ত ফিসে সার্টিফিকেট প্রদান করেনি। পরিষদে রক্ষিত জন্ম নিবন্ধন বহিতে নাম উঠেনি বলে জনগণকে ১/২শ টাকা দিতে বাধ্য করে। দাবীকৃত টাকার কম দিলে কাল-পরসু আসিয়ো বলে তাড়িয়ে দেয়। এভাবে আজ-কাল করতে করতে অনেকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়তে পারেনা। চেয়ারম্যানের একনিষ্ট হওয়াতে আরো দেরীতে পাবে ভয়ে কেউ কিছু বলেনা।
ওয়ারিশ সনদ ও প্রত্যায়ন পত্র কেবলমাত্র ২০টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করার বিধান থাকলেও তা কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। তথ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়োজিতরা জীবনেও উক্ত ফিসে সরবরাহ করেনি। এসব সনদপত্রে ১/২শ সুযোগ বুঝে আরো অনেক টাকায় সরবরাহ করে। মানুষের প্রয়োজনে মানুষ ঠিক ঐ টাকায় নিয়ে নেয়। কারণ প্রয়োজন তো বাঁধা মানে না। দরিদ্র-অতিদরিদ্রের বেলায় এখানকার সেবা নেওয়াতো কেবল দুঃস্বপ্ন। চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় ঐ সব নি:স্ব লোকদের দিনের পর দিন পরিষদের বারান্দায় ঘুরতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিষদের একাধিক মেম্বার ও চকিদার তথ্য সেবা কেন্দ্রের সবুল কাদেরদের অনিয়ম ও সেচ্চাচারিতার কথা জানান। অনেক বলছেন তার শেকড় কোথায়, যে ইচ্ছামত তথ্য সেবা কেন্দ্রকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তথ্যসেবা কেন্দ্রের উচ্চমাত্রা দুর্নীতিতে ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার চাইতে আরো প্রায় ১০ হাজার জন্ম নিবন্ধন বেশী হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। অধিক হারে টাকা পকেটস্থ করার প্রলোভন যেন সেবা কেন্দ্রের নিয়োজিতরা ছাড়তে পারছে না। এতে করেই জনসংখ্যার তুলনায় অধিক জন্ম নিবন্ধন নিবন্ধিত হয়েছে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ অধিকহারে তদন্ত করলে আসল সংখ্যা বেরিয়ে আসবে। জনসংখ্যার চাইতে অধিক জন্ম নিবন্ধন নিবন্ধিত হওয়ায় (৫৬ হাজার জনসংখ্যায় ৬৫ হাজার জন্ম নিবন্ধন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বয়ং তথ্য সেবা কেন্দ্রের সবুল কাদেরকে হুঁশিয়ার করেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদের একটি সুত্র নিশ্চিত করেন।
এব্যাপারে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের পরিচালক সবুল কাদেরের মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, লিখলে লিখেন এখানে কিছু যায় আর আসেনা। এসব পত্রিকায় লিখে কোন কাজে আসবেনা। উপরে ঠিক সব ঠিক।
ইউপি চেয়ারম্যানে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করার পরও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।