ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণে কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা

fec-image

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীল রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও খামারি সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে মূল্যনির্ধারণ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ।

সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নেতারা এমন একটি দাবি নিয়ে মূল্যনির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সংগঠনের ঢাকা বিভাগের সভাপতি কামাল উদ্দিন নান্নুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন।

এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মূল্যনির্ধারণ কমিটিও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটিতে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব/মনোনীত প্রতিনিধি এবং ভোক্তা অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রধান থাকবেন। পাশাপাশি এই কমিটিতে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি/প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।

মন্ত্রী, সচিব বা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মূল্যনির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খন্দকার মো. মহসিন।

অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে রংপুরের খামারি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই ডিম ও মুরগির মাংসের বাজার বেড়েছিল। কিন্তু এর সঙ্গে খামারিরা কেউই জড়িত নন।

ডিম আমদানির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি খামার বন্ধ করে দেই তাহলে ২০ টাকা দামে ডিম খেতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কীভাবে দাম বাড়লো সেদিকে হাত দেন।

চুয়াডাঙ্গার খামারি জাহিদুর রহিম জোয়ার্দার বলেন, আমরা যে ভুট্টা কিনতাম ১৫-১৭ টাকা করে সেটি ৩৪-৩৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সয়াবিনের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের বিল বেড়েছে। কর্মচারীদের বেতনও বেড়েছে। দিন শেষে আমাদের কাছে কিছু নেই। লাভ খাচ্ছে যারা নিয়ে বিক্রি করছে। আমরা উৎপাদক টাকা পাচ্ছি না। যিনি ডিম আমদানির কথা বলছেন তিনি কিন্তু সয়াবিনের বিষয়ে বলছেন না, ভুট্টার দাম কমছে না। আমাদের অবস্থা খারাপ। আমাদের একটা ডিম প্রোডাকশন করতে সাড়ে ৯ টাকা খরচ হয়, কিন্তু বিক্রি করি সাড়ে আট টাকায়। সেখানেও লসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে খামার কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবো?

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, দেশে বর্তমানে পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ৭৯ হাজার। করোনার তিন বছরে খামারিরা ডিম ও মুরগি উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৭৮ শতাংশ ডিম প্রান্তিক খামারিরা সরবরাহ করেন। বড় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে ২২ শতাংশ। প্রতিদিন চার কোটি ৫৮ লাখ ডিম মার্কেটে সরবরাহ করে। বাজার স্বাভাবিক হচ্ছিল, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, ডিমের দাম খামারে ১-২ টাকা দাম বাড়লেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা হালি। ভোক্তাপর্যায়ে এসব মেসেজ যাওয়ায় নেতিবাচক ধারণা শুরু করেছে।

রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদের খান বলেন, ব্যাংকার থেকে স্বাধীন ব্যবসা হিসেবে খামার ব্যবসায় আসলাম। এরপর ডিম ব্যবসা। ২০০০ সালে খামার শুরু করেছিলাম। ১২০ জন আড়তদার ছিলেন। এখন আছেন শুধু ২৬ জন। দেনার দায়ে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন