তাৎপর্যময় পবিত্র শবে বরাত: দীঘিনালার মসজিদে মসজিদে দোয়া

wpid-img_21644019528939

দিদারুল আলম রাফি, দীঘিনালা প্রতিনিধি : 

পবিত্র শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময় রজনী। শবে বরাতকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ নামে অভিহিত করা হয়। পবিত্র এ রাতের অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কুরআন হাদীস দ্বারা বহুল প্রমাণিত। শবে-বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লিখা হয় এবং বিগত বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এক বৎসরের হায়াত-মউত-রিজিক, দৌলত-তথা ভাগ্য নির্ধারণ হয়।

এই রাতে আল্লাহপাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাত্রিতে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নিয়ে জিবরাঈল দুনিয়াতে আসেন এবং রহমত বণ্টন করেন। আরবের বনী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরীর পশমের সংখ্যারও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাত্রে। এ রাত্রিতে কবিরা গুণাহ ব্যতীত অন্যান্য গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা গুণাহগারকেও ক্ষমা করা হয়। 

ফলে এ রাতে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকার, দান-খয়রাত, কবর যিয়ারত করা উত্তম। এই রাত্রে আগামী এক বছরের যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারিত হয় এবং শবে ক্বদরে সংশ্লিষ্ট ফেরেস্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই রাত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামকে শাফাআতের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

পবিত্র এই রজনী উপলক্ষে দীঘিনালার প্রতিটি মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীঘিনলা উপজেলা সদর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সহ আশপাশের সকল মসজিদে মিলাদ-মাহফিল, জিকির ও দোয়া করা হয়েছে। সারা রাত্র জেগে থেকে আজ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন নফল নামাজ, তজবি তাহলিল, জিকির করে মহান আল্লাহ্‌র
নিকট ক্ষমা চাইবেন।

মুসলমানদের কাছে শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রজনী অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত বলে বিবেচিত। আল্লাহ পাক মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা এ রাতে খুলে দেন। পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপকাজ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রাত। এ রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পরবর্তী বছরের জন্য বান্দার রিজিক নির্ধারণ করে সবার ভাগ্যলিপি লেখেন এবং বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেন। এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, পরবর্তী বছরের যাবতীয় ফয়সালা, হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আদেশ-নিষেধসমূহ ওই
রাতে লওহে মাহফুজ থেকে উদ্ধৃত করে কার্যনির্বাহক ফেরেশতাদের কাছে সোপর্দ করা হয়।

লাইলাতুল বরাতে মুমিন বান্দাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। মানুষের ভালো-মন্দ কর্মের হিসাব বা আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের উত্তরণের পথ দেখান। এ জন্য মুসলমানদের কাছে শবে বরাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী উপস্থিত হয়, তখন সেই রাত্রি জাগরণ করে তোমরা সালাতে নিমগ্ন হবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কারণ আল্লাহ তাআলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন এবং তাঁর বান্দাদের ডেকে ঘোষণা দিতে থাকেন—আছে কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা
করব, আছে কোনো রিজিকপ্রার্থী? যাকে আমি রিজিক দেব? আছে কোনো বিপদাপন্ন? যার বিপদ আমি দূর করে দেব? আছে কোনো তওবাকারী? যার তওবা আমি কবুল করব। এভাবে নানা শ্রেণীর বান্দাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আহ্বান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজা, মিশকাত)

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন