তিন সন্তান নিয়ে ঘর বন্দি রোকসানা আক্তার

DSC_0015 copy

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকায় নিজ বসতঘরে ৩ সন্তান নিয়ে বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন রোকসানা আক্তার (২৮)। রোকসানা সবসময় প্রতিবেশিদের সাথে মিলেমিশে থাকতেন। আর সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। কিন্ত আজ থেকে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঘর থেকে বের হতে পারছেননা। বন্ধ রয়েছে সন্তানদের স্কুলে যাওয়া। তার বসতভিটার গেইট সবসময় ভিতর থেকে তালা লাগানো থাকছে।

এর কারণ একটাই কয়েকজন যুবক প্রায়ই ছুরি নিয়ে তার গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। রাতবিরাতে ঘরের চালে ইট ছুঁড়ে মারছে। আর হুমকি দেয় ঘর থেকে বের হলে ছুরিকাঘাত করবে। সন্তানদের অপহরণ করবে। এরমধ্যে ওই যুবকেরা তার বসতঘরে ঢুকে ভাংচুরও চালিয়েছে।

আর এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী রোকসানার স্বামী হাবিব উল্লাহ (৩৮)। যিনি মাস খানেক আগে তার অজান্তে মর্জিনা নামে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করে। মর্জিনা ওই এলাকার ফরিদ মাঝির মেয়ে। আর হাবিব উল্লাহ হলেন একই এলাকার মৃত শফিউল্লাহর ছেলে।

প্রবাসী হাবিব উল্লাহ বিদেশ থেকে ফেরার পরেই এ ঘটনা ঘটায়। তিনি মর্জিনাকে বিয়ের পর থেকে রোকসানাকে ভিটা ছাড়া করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ ওই জায়গা হচ্ছে রোকসানার নিজস্ব সম্পতি। এদিকে তার সাবেক স্বামীর সাথে যুক্ত হয়েছে মর্জিনার ভাই ছাইদে আনোয়ার। যিনি এলাকার পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত। এ ছাইদে আনোয়ারই ছুরি হাতে দল-বল নিয়ে রোকসানার গেইটের সাময়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হুমকি দেয় ওই ভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। নয়ত হত্যা করে ফেলব। আর সন্তানদের অপহরণ করবে।

এসবের ভয়ে রোকসানা ঘর বন্দি অবস্থায় রয়েছে। ভয়ে সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যে রোকসানার আয়ের উৎস্যও বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ তার বসতভিটায় থাকা দুই ভাড়াটিয়া পরিবারকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে ছাইদে আনোয়ার ও তার লোকজন। এ অবস্থায় তার খুবই মানবেতর দিন কাটছে। তাদেরকে জানালা দিয়ে খাবার-দাবার দেয় প্রতিবেশিরা।এসব অভিযোগ করেন রোকসানা।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী হাবিব উল্লাহ বিয়ের আগে রিক্সা চালক থাকায় রোকসানার পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। এর পরেও তিনি সব কিছু ত্যাগ করে এ রিক্সা চালক স্বামীকে বিয়ে করেন। তাই পরিবারের সাথে সর্ম্পক বিচ্ছিন্ন রোকসানার। যদিও তার বাবা পাহাড়তলীর ওই জায়গাটি কিনে দিয়েছিল রোকসানাকে। এদিকে তার স্বামী বিদেশে গিয়ে জীবনের মান পরিবর্তন করে। আর বিদেশ থেকে এসেই আরেকটি বিয়ে করে রোকসার শেষ সম্বল পৈত্রিক সম্পত্তিটি ছিনিয়ে নিতে চাইছে। তাই রোকসানার উপর এ চরম অত্যাচার।

রোকসানার অজান্তে কিশোরী মর্জিনাকে বিয়ে করায় হাবিব উল্লাহ’র বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ এ মামলা পরিচালনা করতে না পারায় ওই অবস্থায় রয়েছে মামলার গতি। এদিকে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা উঠিয়ে নিতে এবং বসতভিটা ছেড়ে দিতে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবন যাপন এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছে রোকসান। পাশাপাশি সহযোগিতা চাইছে সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পতি রক্ষার্থে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশ্ববর্তী কয়েকজন প্রতিবেশি জানায়, এ ধরনের বরবর ঘটনা আগে কখনও দেখেনি। একদিকে রোকসানার মানবেতর জীবন অন্যদিকে তার উপর অত্যাচার। আর এ অত্যাচার করছে হাবিব উল্লাহ ও তার নতুন শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন