থামানো যাচ্ছে না বনের ভেতরে বালু উত্তোলন, দিব্যি চলছে বালু লুটের মহোৎসব

fec-image

কক্সবাজারের উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন চকরিয়া উপজেলার ডুলা হাজারা রংমহল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সংলগ্ন দাঙ্গা ঘাটের গহিনবন এলাকায় দিব্যি চলছে বালু লুটের মহোৎসব। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত সেখানে অভিযান চালিয়ে লাখ টাকার বেশি জরিমানা ও বিগত পাঁচ মাসে অন্তত অর্ধশত সেলো মেশিন গুড়িয়ে ধ্বংস করেছেন।

এছাড়াও জব্দ করেছে কয়েক হাজার ফুট বালি উত্তোলনের পাইপ। একের পর এক অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না বালু খেকোদের। রংমহল এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ডুলাহাজারা রংমহলে কয়েক বছর ধরে চলছে ভয়াবহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড, হুমকিরমুখে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানা দেওয়াল, আশপাশের বসতবাড়ি, ক্ষত-বিক্ষত ডুলাহাজারা-বগাইছড়ি সড়ক, ধুলোর যন্ত্রণায় অতিষ্ট মানুষ, ধুলোর ঢাকা পড়েছে বসতবাড়ি ও দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা।

রংমহল গ্রামের পাশেই বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা দেশের একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পার্কের সীমানা দেওয়াল লাগোয়া রয়েছে অন্তত ৫০০ একরের একটি বড় বিল। বিলটি ‘দাঙ্গার বিল’হিসেবে পরিচিত। বিলের চারপাশে সংরক্ষিত বনভূমিতে সৃজন করা আছে সামাজিক বনায়ন।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সমন্বয়ে গত বুধবার সাফারি পার্কের দেয়াল লাগোয়া দাঙ্গা ঘাট এলাকায় ত্রিমুখী অভিযান চালিয়ে অন্তত দশটি বালি উত্তোলনের সেলোমেশিন ও প্রায় এক হাজার ফুটপাইপ জব্দকরেছেন।

এসময় জব্দকৃত সেলোমেশিন গুড়িয়ে ধ্বংস করেছে প্রশাসন। বালি উত্তোলনের পাশাপাশি ওই এলাকায় স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে গেল দুইবছর ধরে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন বেশকিছু পাহাড় এবং চাষের জমি কেটে অন্তত শতকোটি টাকার মাটিও লুটেনিয়েছে।

জড়িতরা বেশিরভাগ সরকারি দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সেই কারণে পাহাড়, টিলা, বালি ও চাষের জমি লুটের মহোৎসব চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা বন বিভাগ এই পর্যন্ত কার্যকর কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়নি।

বালু লুটের মহোৎসবের কারণে গেল বছর অতি বর্ষণজনিত কারণে সাফারি পার্কের দক্ষিণপাশের দেয়াল ধ্বসে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পুনরায় সাফারি পার্কের দেয়াল ধ্বসের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পার্ক কর্তৃপক্ষ।

ডুলা হাজারা রংমহল এলাকার আবদুল্লাহ জানান, দীর্ঘ দুইবছর ধরে কতিপয় প্রভাবশালী বালি দস্যু পাহাড় ও দাঙ্গার বিলেরভূগর্ভস্থ বালুউত্তোলন এবং মাটিকাটার পাশাপাশি আবাদি জমি শ্রেণি পরিবর্তনের করে বিশাল গর্তে পরিনত হয়েছে।

এছাড়াও রংমহল সড়কের রাস্তা দিয়ে ভারি যানবাহন যোগে নিত্যদিন বালি সরবরাহের কারণে মারাত্মক ধুলোবালি সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্কুল-কলেজেপডুয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ঠহচ্ছে, তেমনি অপরদিকে ছেলে-মেয়েদের রাস্তা দিয়ে যাতায়ত করতে ব্যাপক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকাবাসি জানিয়েছেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কায় আতঙ্ক রয়েছে রংমহলগ্রামের কয়েকশত বাসিন্দার মধ্যে। সীমানা দেওয়াল ধ্বসে যেতে পারে আশঙ্কা সাফারিপার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যেও। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় নিরীহ বাসিন্দারা পরিবেশের ভয়াবহ এই কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখলেও মুখ খোলার কারো কাছে সাহস নেই। কারণ যারা পরিবেশ নষ্টকরছে ও বনবিভাগের সমতল ভূমিতে ধ্বংস  যজ্ঞ চালাচ্ছেন তারা সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা।

পরিবেশ বিধ্বংসী বালু উত্তোলন কর্মকান্ডে সরাসরি যারা জড়িত রয়েছেন তারা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেলে পূর্বে থেকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কারন সেখানে বসানো হয়েছে বালুদস্যুদের নিজস্ব পাহারাও।

বিষয়টি প্রসঙ্গে সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ জামান বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সাফারি পার্ক লাগোয়া দাঙ্গা ঘাট ও বগাচতর এলাকা থেকে বালি ও মাটি লুটের ঘটনায় সত্যতা পেয়ে ইতোপূর্বে সেখানে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাটি ও বালিভর্তি ডাম্পার ট্রাক জব্দ করে জরিমানাও করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে অন্তত অর্ধশত বালু উত্তোলনে মেশিন ও বিপুল পরিমাণ পাইপ।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অভিযানের পর বেশকিছুদিন সেখানে বালু উত্তোলন ও মাটিকাটা বন্ধ ছিল। তবে প্রশাসনের এ অভিযান অব্যহৃত থাকবে। নতুন ভাবে বালু উত্তোলন করা হলে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন