দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখরিত পানছড়ির চেংগী নদীর রাবার ড্যাম

DAM

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি :

দু’মাস আগেও কারো কল্পনায় আসেনি এই অচেনা জায়গাটি শত শত দর্শনাথীর পদচারনায় হয়ে উঠবে মুখরিত। কিন্তু সবার ধারনা পাল্টে দিল একটি রাবার ড্যাম। ভারত সীমান্ত থেকে দু’পাশে ঝাউ বন বেষ্টিত চেংগী নদীর শ্রোতধারা খাগড়াছড়ির বুক চিরে সাপের মতো এঁকে বেঁকে গিয়ে পতিত হয়েছে পার্বত্য চট্টলার সুরালো সাম্পানওয়ালার গান গাওয়া সেই বিখ্যাত কর্ণফুলী নদীতে। এই চেংগী নদীটি বছরের বেশীর ভাগ সময় শুকনো থাকায় চেংগী নদীর বুকে জমে থাকা ছোট ছোট বালুর চরগুলো দেখলেও মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু পানির অভাবে এলাকার কৃষকরা যখন কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ প্রায় হারিয়েই ফেলেছিল তখনই সরকারের একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ যেন কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে কাজে দ্বিগুন উৎসাহের যোগান দিল। পানছড়ি সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত শান্তিপুর এলাকা।

শান্তিপুর অরণ্য কুটির যেমনি দেশব্যাপী একটি পরিচিত নাম ও পর্যটন কেন্দ্র ঠিক তার প্রবেশ মুখের রাবার ড্যামটি যেন শান্তিপুর এলাকাকে সোডিয়াম লাইটের মিডিয়াম আলোতে পরিচিত করে তুলেছে এক মিনি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে। রাবার ড্যামটি বেয়ে ঝর্ণার পানি পড়ার দৃশ্য দেখতে দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। চেংগী নদীর মাঝ বরাবর বিশালাকার রাবারের ড্যামটি যখন ফুলে উঠছে তখনই যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। একদিকে পানি জমছে অন্যদিকে ড্যামের উপর দিয়ে ঝর্ণার মত কল কল আওয়াজে পানি বের হচ্ছে এই দৃশ্যটিই নয়নাভিরাম যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের পানি খেলা। আসলে উপভোগ করার মত একটি দৃশ্য।

পৌষের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ঝর্ণার পানিতে নিজেকে বিলেয়ে দিচ্ছে অনেক দর্শনার্থীরা। বুট-বাদাম খেতে খেতে এপার-ওপার ঘুরে বেড়াচ্ছে আবাল-বৃদ্ধ ও বনিতারা। দর্শণার্থী পানছড়ি বাজারের মোবাইল মেলার শরিফুল ইসলাম, দমদম এলাকার ফারুক, স্কুল ছাত্রী আমাতুল্লা তাসনীম এশা, এশরাক জানান, খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, তাই উপভোগ করতে এসেছি।

এই রাবার ড্যামের ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তিন পার্বত্য জেলার মাঝে একটিই রাবার ড্যাম যা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকার জন্য বিশাল একটি সম্পদ। নয় কোটি ছাপান্ন লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই ড্যামটি। ২০১০ সালে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজটি শুরু করে ২০১৩ সালের জুন মাসে কাজটি বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। বর্তমানে পানছড়ি চেংগী নদী রাবার ড্যাম সমবায় সমিতি লি: যাহার নিবন্ধন আদেশ নং ৫২১/খাগড়ার মাধ্যমেই এটি পরিচালিত হচ্ছে।

পানছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয় কান্তি চাকমার সাথে এই ড্যামের সুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে  তিনি জানান, এই ড্যামের ফলে এখন পানছড়ি এলাকায় সারা বছরই পানি থাকবে তাই চেংগী নদীতে মৎস্য চাষ করে পানছড়ির চাহিদা মিটিয়ে পুরো খাগড়াছড়ি জেলারও চাহিদা মেটানো যাবে। এই রাবার ড্যাম শুধু পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নয়, এর মাধ্যমে কৃষকেরা কৃষি কাজে যেমন সুফল ভোগ করবে, তেমনি মাছ চাষেও প্রচুর সাফল্য আসবে বলে তারা ধারনা করছেন পানছড়ির অভিজ্ঞ মহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন