দীঘিনালায় বন সংরক্ষণ ও সচেতনতায় গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত

fec-image

“বন বাঁচলে,থাকবে পানি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্ট্রেনদেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র প্রকল্পের আওতায় তৃণমূল সংস্থা’র আয়োজনে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস ওয়াটারশেড কো-ম্যানেজমেন্ট এক্টিভিটি বন সংরক্ষণ ও সচেতনতায় গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (৩ এপ্রিল) ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ প্রাঙ্গনে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার ভাইস চেয়ারপার্সন চামেলী ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাশেম।

অনুষ্ঠানে আশিকা প্রকল্পের কমিউনিকেশন অফিসার প্রবীর চাকমা’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা’র মনিটরিং ও রিপোর্টিং অফিসার মিহির কান্তি ত্রিপুরা।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক বন আজ ধ্বংসের মুখে। আমাদের প্রকৃতিক বন রক্ষা করতে হবে। আমাদের এ অঞ্চলে নানান প্রজাতির পাখি, নানান প্রজাতির পশু, নানান প্রজাতির ঔষুধী গাছ, নানান প্রজাতির বাঁশ ছিল আজ তা প্রায় সবই বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এ হারিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ হলো আমরা কারণে-অকারণে বন উজাড় করতে ব্যস্ত।

বন উজাড়ের জন্য শুধু আইন দিয়ে নয়, আমাদের স্বদিচ্ছা দিয়েও আমরা প্রাকৃতিক বন রক্ষা করতে পারি। আমাদের জাতি সম্প্রদায়ের জন্য নি:স্বার্থভাবে কাজ করতে হবে। এসময় তিনি বন সংরক্ষণ ও সচেতনতায় গ্রামীণ মেলার এই উদ্যোগকে জানিয়ে উপজেলা পরিষদের পক্ষ সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেন উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাশেম।খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালার গ্রামীণ বন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক বন রক্ষায় সচেতনা বৃদ্ধি ও বন সংরক্ষণে জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য এ প্রকল্পের উদ্যোগে অবহিতকরণ ও সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের ভূয়ঁসী প্রশংসা করেন তিনি।

বক্তারা আরও বলেন, পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির বাহক। পরিবেশের ওপর নির্ভর করেই বিকাশ ঘটে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের । সৃষ্টির আদি থেকেই পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ওপরেই নির্ভর করছে প্রাণ ও প্রকৃতির অস্তিত্ব। পরিবেশ প্রতিকূল হলে জীবের ধ্বংস ও বিনাশ অনিবার্য । তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা মানুষেরাই নানাভাবে বিষিয়ে তুলেছি, দূষিত করে আসছি। বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ।

উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত বব্যবহার,অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য ইত্যাদি। পরিবেশদূষণ সমস্যা প্রকট হওয়ায় মানবসভ্যতা আজ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত, চরম হুমকির মুখে, যা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। এ থেকে মুক্তির উপায় মেলাতে হলে আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে,বন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়।দ্বিতীয় পর্বে গ্রাম আদালত বিচার ব্যবস্থা’র বিষয়ে একটি “পথ নাটক” মঞ্চায়িত হয় এবং দলীয় নৃত্য ও গান পরিবশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।পথনাটকের মূল মেসেজ হচ্ছে..ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে: অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি পূর্বে অন্য কোন আদালত কর্তৃক কোন আদালত গ্রাহ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকে এবং দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে: যখন কোন অপ্রাপ্ত বয়স্কের স্বার্থ জড়িত থাকে, বিবাদের পক্ষগণের মধ্যে বিদ্যমান কলহের ব্যাপারে কোন সালিশের ব্যবস্থা (সালিশি চুক্তি) করা হয়ে থাকলে,মামলায় সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কার্যরত কোন সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকলে এবং কোন অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রাম আদালতে কোন মামলা দায়ের করা যায় না।গ্রাম আদালতে বিচার ব্যবস্থাকে আরো বেগবান ও সম্পৃক্ত করার জন্য করার জন্যই সচেতনতামূলক পথ নাটকের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে অবগত করার জন্য মঞ্চায়িত হয়।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা,পার্বত্য চট্টগ্রাম ডিসিএস নেটওয়ার্ক খাগড়াছড়ি শাখা’র সভাপতি ও হেডম্যান যুব লক্ষণ চাকমা,অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন চাকমা প্রমুখ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা ইউনিয়নের ১-২-৩নং ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য গীতা চাকমা ,৪-৫-৬ নং ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য লিসা চাকমা, ৭-৮-৯নং ওয়ার্ডে সদস্য নিহারিকা চাকমা, সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা, সুবল চন্দ্র চাকমা, প্রমোদ কান্তি চাকমা, উপগুপ্ত চাকমা, জীবন শান্তি চাকমা, কৃষ্ণ রঞ্জন চাকমা, ধর্ম জ্যোতি চাকমা, বিনয় ধন চাকমা, ত্রিশংকর চাকমাসহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য যে, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা নার্সারি উন্নয়ন, বৃক্ষরোপন, সামাজিক বনায়ন, বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় শাক-সবজি চাষ ও পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহন করে থাকে। সরকারী উন্নয়ন কার্যক্রম সমূহ সমন্বয়ের মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন ও উন্নয়ন করা। সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম সমূহ সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন ও বিস্তার করে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন