দেড় বছরের মধ্যে নিবিড় মনিটরিংয়ে আসবে ভারত-মায়ানমার সীমান্ত, আরো ৭২টি বিওপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সীমান্ত চোরাচালান, মানব ও মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে মাদক চাষসহ নানা ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তে বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টি বিওপি স্থাপিত হয়েছে। আগামী দেড় বছরের মাথায় আরো ৭২টি বিওপি স্থাপন করে দেশের পুরো সীমান্ত নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়নের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম উপরোক্ত তথ্য জানিয়েছেন।
বিজিবি’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভারত এবং মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের মোট সীমান্তপথ আছে ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৬ কিলোমিটার স্থল এবং ১০৮ কিলোমিটার জল সীমান্ত মিলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা হচ্ছে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার। অপরদিকে মায়ানমারের সঙ্গে ২০৮ কিলোমিটার স্থল এবং নাফ নদীসহ জলপথে ৬৩ কিলোমিটার সীমান্ত মিলে মোট ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। দীর্ঘ এই সীমান্ত পথের মধ্যে ভারত ও মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্তের পরিমাণ ৫৩৯ কিলোমিটার। অরক্ষিত সীমান্তের বেশির ভাগই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। এগুলোর অনেক স্থানে হেলিকপ্টার ছাড়া যাওয়া যায় না। কোন কোনটিতে যেতে হলে তিন চারদিন পায়ে হাঁটতে হয়।
এই ধরনের অরক্ষিত সীমান্ত গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণহীন রয়েছে। আর এ অরক্ষিত অঞ্চলের অনেকস্থান দিয়ে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে। রয়েছে মাদক পাচারের রুট। মানব পাচারও এসব অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে হয়ে থাকে। তবে বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় বাংলাদেশের ভূমিতে মায়ানমারের সন্ত্রাসীরা এসে পপি বাগান তৈরি করে। এরা মাদক তৈরি এবং মাদক পাচারের রুট হিসেবেও অরক্ষিত সীমান্ত ব্যবহার করছে। এই অবস্থায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) অরক্ষিত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। উক্ত সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি বর্ডার আউটপোস্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ৪টি বিওপি স্থাপন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন অরক্ষিত সীমান্তে আরো ১৬টি মিলে ইতোমধ্যে ২০টি বিওপি স্থাপন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রিজিওয়ানের রিজিওয়ান কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম বলেন, ‘অরক্ষিত থাকায় যে সমস্যাগুলো হওয়ার কথা তা সবই হয়। দু’দেশেরই সন্ত্রাসীরা যেকোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকণ্ড ঘটিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পাশের দেশে আশ্রয় গ্রহণের চেষ্টা করে।’
মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক কূটনীতিক মেজর (অব:) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘দু’দেশের অরক্ষিত সীমান্তকে রক্ষিত করা গেলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে মাদক নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রে সীমান্তে পাহারা জোরদারের বিকল্প নেই।’
কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে চোরাকারবারি ও রহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেকটা রোধ করা যাবে।’
রাঙামাটি, গুইমারা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজারসহ ৫টি সেক্টরের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নে রয়েছে মোট ২০টি ব্যাটেলিয়ন। এছাড়া এ অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্তকে সুরক্ষিত করার জন্য নতুন ৭২টির মধ্যে ৭০টিই হবে হেলি-সাপোর্ট বিওপি।