নদীতে বিলিন হচ্ছে সড়ক: মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, দূর্ভোগ চরমে

chakaria-pic-road-17-10

চকরিয়া প্রতিনিধি:

একের পর এক ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট-কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি বেহাল দশা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন চোখেই পড়ছেনা। এই অবস্থায় কোনাখালীর একাধিক পয়েন্টে সড়কটি বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এর পরেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর মাতামুহুরীর ভাঙন থেকে সড়কটি রক্ষায় কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত যানবাহন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সড়কটি মূলত মাতামুহুরী নদীর তীর তথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ। এই বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার এবং যাতায়াতের সুবিধার্থে বিগত ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে দুই দফায় সড়কটিতে পিচ ঢালাই দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।  কিন্তু এর পর থেকেই সড়কটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে রয়েছে। এরইমধ্যে বিগত সময়ে একাধিক ভয়াবহ বন্যায় সড়কটি ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এতে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে এই সড়কে।

সরেজমিন গিয়ে সড়কটি দেখা যায়, চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট হয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত মোটামুটি চলাচল উপযোগী থাকলেও কোনাখালীর বাঘগুজারাস্থ মাতামুহুরী নদীর সেতু থেকে বাংলাবাজার হয়ে বদরখালী বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষেই বিদ্যমান সড়কটি। অন্তত ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীর তীর তথা সড়কটি নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। তাছাড়া কিছুদূর পর পর বড় বড় খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় দূর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে যাত্রী-সাধারণের। যানবাহন চালক ও যাত্রী-সাধারণকে বেশি সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে কোনাখালী ইউনিয়নের সিকদার পাড়া এবং বাংলাবাজার এলাকার পশ্চিমে সড়কের অর্ধেকাংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায়। এই দুই স্থানে সড়ক একেবারে সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিও বেড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কম করে হলেও ৪ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গা থেকে প্রতিদিন যাতায়ান করে ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন।

কোনাখালী ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা মমতাজ আহমদ, আরমান সিকদার বলেন, ‘এটি মূলত মাতামুহুরী নদীর তীর তথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। ২০০৪ সাল থেকে এই বাঁধকে সড়ক হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাঁধের ওপর পিচ ঢালাই দেয়। তখন থেকেই ব্যাপকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয় এবং বিকল্প সড়ক হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে সড়কটি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দোকানপাট ও মাছের ঘের নির্মাণ করায় নদীতে পানির প্রবাহ বাঁধার মুখে পড়ে। এতে একদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এবং অপরদিকে সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে সড়কটি বার বার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আসছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এনিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

চকরিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, বিগত ২০০৪ প্রথম দফায় সড়কটিতে পিচ ঢালাই দেওয়া হলে যানবাহন চলাচল শুরু হয় সড়কটিতে। এর পর দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালেও দেওয়া হয় পিচ ঢালাই। কিন্তু বিগত দুইবছরের একাধিক ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের কবলে পড়ে সড়কটি। অনেক স্থানে বিলিন হয়ে যায় নদীতে।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ‘কোনাখালীর বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি আমার ইউনিয়নের রক্ষাকবচ। এটি বর্তমানে সড়ক হলেও একসময় ছিল নদীর বাঁধ। বিকল্প চলাচলের সুবিধার্থে এটিকে সড়ক হিসেবে রূপান্তর করেন এলজিইডি। কিন্তু প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে পড়ে নদীতে বিলিন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এনিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সড়ক দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঘটছে নানা দূর্ঘটনাও।

চেয়ারম্যান বলেন, সড়কটিকে টেকসই করতে ইতিমধ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করে গেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু কাজ শুরু না হওয়ায় দূর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে।

চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিন উল্লাহ উল্লাহ বলেন, একের পর এক বন্যায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়। এর পর বাঘগুজারা থেকে বদরখালী পর্যন্ত সড়কটির প্রস্তাবনা প্রেরণ করার পর নির্দেশনা মোতাবেক দরপত্র আহবান করা হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু করা হবে।’

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, মাতামুহুরী নদীর তীরের সড়কটি যাতে টেকসই থাকে সেজন্য সড়কের নদীতীরের অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন