নাইক্ষ্যংছড়িতে তড়িঘড়ি করে এডিবি’র বিশেষ বরাদ্দের টাকা উত্তোলন

fec-image

দুর্নীতি

মো: আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিণিধি:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে তড়িঘড়ি করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থ উত্তোলন ও কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে খরচ দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় এলাকার সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বরাদ্দ দেখানো ওসব প্রকল্পের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন থাকবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এটিকে আবার অনেকে লুটপাটের আয়োজন হিসেবে দেখছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এডিবির ৪০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ অর্থ যথাযথভাবে খরচ করতে না করতেই বছরের শেষ মূহুর্তে ১৮জুন উপজেলায় আরও প্রায় ২৪লক্ষ ৪২হাজার টাকার বিশেষ বরাদ্দ আসে। প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন, বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডারকরণ, অনুমোদন ও কার্যাদেশ প্রদানে কমপক্ষে ২/৩ সপ্তাহ ব্যয় হলে বরাদ্দ ফেরত যাবে বা জবাবদিহিতা করতে হবে, এমন আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে গত ১৮জুন গোপন আরএফকিউ কোটেশন টেন্ডার করে উপজেলার বিশেষ সভায়।

এতে অনুমোদিত প্রকল্পে দেখা যায়, মোট ১১টি প্রকল্প পাচঁ ইউনিয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন এলাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেকে গণসৌচাগার নির্মাণ ২লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৮৬টাকা, চাকঢালা জুনিয়র হাইস্কুলের পাশে ড্রেন নির্মাণ ২লক্ষ টাকা, ইউনুছ মাস্টারের বাড়ির পাশে ড্রেন নির্মাণ ২লক্ষ ৩৩হাজার ৩০০টাকা, বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল স্থাপন ১লক্ষ ৮৬হাজার ৬০০ টাকা, বাইশারী করলিয়া মুরা সড়কে ছালেহ আহামদের বাড়ি থেকে নুর মোহাম্মদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় এইচবিবি রাস্তা ও নারিবুনিয়া কালভার্টের ছাদ পুন:নির্মাণ ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ঘুমধুম ইউনিয়নে পাহাড়পাড়া রাস্তায় ব্রিক সলিং এর সম্মুখ থেকে এলজিএসপির কালভার্ট পর্যন্ত ব্রিক সলিং নির্মাণ ৩লক্ষ টাকা, কচুবনিয়া থেকে কুতুপালং হাইস্কুলে যাওয়ার রাস্তায় দুলাল বড়ুয়ার বাড়ির পাশে স্বাব কালভার্ট নির্মাণ ১লক্ষ ৮৬হাজার ৬০০ টাকা, দোছড়ি ইউনিয়নে কোলাচি ক্রোক্ষ্যং রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনে বল্লির পাইলিং সিট দ্বারা প্রতিরক্ষার দেয়াল নির্মাণ ১লক্ষ ৮৬হাজার ৬০০টাকা, লেমুছড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে কোলাচি পর্যন্ত রাস্তা ও বিজিবি ক্যম্প থেকে কালুরঘাট রাস্তা মেরামত ও প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ ১লক্ষ ৮৬হাজার ৬০০টাকা, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ১ ও ৫নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন স্থানে স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন ১লক্ষ ৮৬হাজার ৬০০টাকা, ভগবান টিলা যাওয়ার রাস্তায় ভগবান টিলার নিকট কালভার্ট নির্মাণ ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ হারালে তড়িঘড়ি করায় যেসব আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে, সেসব কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিশেষ বরাদ্দে।

বর্ধিত চুক্তিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বান্দরবানের মের্সাস মোক্তার আহামদ এন্টার প্রাইজ, আলীকদমের মের্সাস ফারজানা এন্টার প্রাইজ, বান্দরবানের মের্সাস জাওয়াদ এন্টার প্রাইজ, কক্সবাজারের মেসার্স নজরুল কন্সট্রাকশন এবং কক্সবাজারের মের্সাস ফয়েজ এন্টারপ্রাইজসহ পাচঁটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দেখানো হয় বিশেষ কমিটির রেজুলেশনে।

নির্দেশনা অনুযায়ী কাজের দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের নির্দেশনা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা করেনি এলজিইডি।

তবে এলজিইডি বলছে, দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নির্বাচন পূর্বক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। এতে টাকাটা ফেরত যেত। যার কারণে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে ৫% নিম্ন দরে বরাদ্দে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। যদিওবা বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে ১৭-১৮দিন সময় পেয়েছিল দরপত্র প্রকাশের।

তড়িঘড়ি করে অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে রহস্যজনক ভূমিকার কারণে ইতিপূর্বে এডিবির বরাদ্দ দেওয়া ৪০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকায় সম্পাদিত কাজের গুণগুত মানও খতিয়ে দেখার জন্য উর্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ বলেন- জুন মাসের মধ্যে এডিবির অর্থ খরচ করতে না পারলে টাকাটা ফেরত দিতে হতো। তাই আলোচনা করে সরকারি নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী সভার রেজুলেশনের মাধ্যমে আরএফকিউ কোটেশন এবং বাকি অর্থে পিআইসি টেন্ডার করা হয়েছে। কিছু টাকা ফেরতও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী জামির হোসেন, ব্যংক থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে কাজ যথাযত ভাবে হবে বলে জানান। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তই তিনি মেনে চলছেন বলে দাবী করেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবু শাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম জানান, প্রকাশ্য টেন্ডারের বিষয় ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন সবই সরকারি বিধান। তবে ঠিকাদারদের কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ দেওয়া হবেনা বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment
আরও পড়ুন