নাইক্ষ্যংছড়িতে বাগানের ক্ষতিরোধের অজুহাতে কৃষকের পশু জবাই

fec-image

বাগানের ক্ষতির আশঙ্কা রোধে গরু-ছাগল জবেহ, ভক্ষণ আর বিষ প্রয়োগ-কুপিয়ে হত্যা ও জখম করেন কোম্পানী লোকে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠরোধ করতে থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন কোম্পানী নিজেই।

এধরণের অভিযোগ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের সীমান্তবর্তী আশারতলী পয়েন্টের জামছড়ি গ্রামবাসীর।

গ্রামবাসী বলেন, জামছড়ি গ্রামের লোকসংখ্যা ২ হাজার। গ্রামের সবাই কৃষক ও শ্রমিক। এদের মধ্যে ৯০ ভাগ মানুষ শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে। আর পাহাড়ের ঢালু ও অনুর্বর জমিতে কম-বেশি ধান চাষবাদ করে।

অনেকের দাবি তারা অর্থ সংকটের কারণে হাটে যান না অধিকাংশ সময়। আবার অনেকের দাবি মাসে অনেক সময় চাল থাকে না তাদের ঘরে।

ঠিক এমন দৈন্যদশায় জমদূত হয়ে আসে তাদের কাছে এক প্রভাবশালী। যার হাত অনেক লম্বা। ইনি সেই গরু গরু-ছাগল খেকো নুরুল আলম কোম্পানী। যিনি রাজনীতিও করেন উপজেলা কেন্দ্রিক।

অভিযোগকারী মুহসেন আলীর পরিবার জানান, ইতিপূর্বে তাদের ১টি গরু জবেহ করে খেয়ে ফেলে কোম্পানীসহ তার লোকজন।

আবদুল আজিজ ও আবদুল মজিদের পরিবার জানান, তাদের ৩টি ছাগল খেয়ে ফেলে কোম্পানী ও তার বাহিনী।

গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে হোসেন আহমদ, গুরা মিয়ার ছেলে আবুল কালাম, আলীমুদ্দিনের ছেলে রফিক উদ্দিন,রফিকুদ্দিনের ছেলে অবদুর রহমান,আবদুল আলমের স্ত্রী সোনা মেহের ও মৃত আমীর আলীর স্ত্রী রশিদা বেগমসহ অনেকে এ প্রতিবেদককে জানান, তারা আজ অসহায়। জীবনের চাকা খ্যাত হালের ও দুধের গরু আর পালিত ছাগলের উপর শনির দশা লেগেছে।

এসব প্রাণির জম এখন নুরুল আলম কোম্পানী ও তার দুধর্ষ ক্যাডাররা। তাদের অভিযোগ, কোম্পানীর বাড়ি কক্সবাজার পিএমখালী হলেও তিনি ভোটার নাইক্ষ্যংছড়িতে। তিনি বিএনপির সাবেক সভাপতিও। বিএনপি সরকারের আমলে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আশারতলী সীমান্তে অন্তত ৪ হাজারের অধিক একর গরু ছাগলের চারণ ভূমি দখলে নিয়ে নেয়। যার বিষয়ে অনেকের অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে আর-কবুলিয়তের জমি অবৈধ পন্থায় বাগে নিয়ে সেখানে রাবার বাগান ও অন্যান্য বাগানের কথা বলে সেসব অবুঝ প্রাণির উপর চালায় পৈশাচিকতা।

তারা অভিযোগ করে বলেন, তাদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক গরু ছাগল নুরুল আলম কোম্পানী নিজে এবং তার কর্মচারীরা কুপিয়ে জখম করে। এধরনের আহত অবস্থায় গরু মারাও গেছে। আবার ১টি গরুকে বিষ পানে মেরেও ফেলেছে । এভাবে অন্তহীন অভিযোগ সে কোম্পানীর বিরুদ্ধে। যা পর্যায়ক্রমে তারা তুলে ধরবেন। প্রয়োজনে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে আইনের আওতায় আনতে প্রতিবাদ জানাবেন।

এ প্রতিবেদক গত ২৯ এপ্রিল সরেজমিন গিয়ে জানতে পারেন, কুপিয়ে জখম করা বেশ ক’টি গরুর দশা অতি করুণ। এ সবের একটির লেজ নেই, আরেকটির পা কেটে দেয়া হয়েছে। ব্যান্ডেজে বেশ ক’টি গরু মাটিতে পড়ে রয়েছে।

আবার কয়েকটি গরুর নানা স্থানে লম্বা দায়ের কুপের ক্ষত দেখতে পাওয়া গেছে। যা করছেন কোম্পানী লেকজন।

এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ছাবের আহমদ বলেন, একজন সম্মানী মানুষের এতো অমানবিকতা! মানুষ মারে মেনে নিলাম। পশুর কী দোষ? জবেহ করে খেয়ে ফেলা, কুপিয়ে আঘাত করা আবার জরিমানা দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করা, সব-ই নুরুল আলম কোম্পানীর কুঅভ্যাস। অবৈধ পন্থায় অন্তত ৫ হাজার একর গরু ছাগলের চারণ ভূমি তিনি দখল করে বাগানের নামে নিজের আখের গোছাচ্ছেন তিনি । তার বাগানের পাশের এই একটি মাত্র গ্রামের নিরীহ মানুষের উপর এ পাশবিকতা সে কখনো মেনে নেবে না।

তিনি আরো বলেন, তিনি একজন স্থানীয় মেম্বার হিসেবে এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিচার চান প্রশাসনের কাছে ।

অভিযুক্ত কোম্পানী নুরুল আলম জানান,  এসব ডাহা মিথ্যা। আর গরু-ছাগল তার বাগানের ক্ষতি করলে কুপ না মেরে চুমু দেবে না-কি বলে।  এ কথা জোর গলায় বলেন তিনি? এভাবে বলতে বলতে কল কেটে যায় উভয় প্রান্ত থেকে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন বলেন, বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগ শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি তা দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

থানার অফিসার ইনচার্জ টানটু সাহা বলেন, এধরনের বিষযে একটি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি । সত্যতার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “নাইক্ষ্যংছড়িতে বাগানের ক্ষতিরোধের অজুহাতে কৃষকের পশু জবাই”

  1. এই বেটা আমাদের এলাকায়ও অনেক নিরপরাধ মানুষকে কষ্ট দিয়েছন। জেল কাটিয়েছেন। এর বিচার হওয়া সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন