নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি’র ফের গুলিবর্ষণ: বাংলাদেশী কাঠুরিয়া গুরুতর আহত
নিজস্ব প্রতিনিধি::
আবারো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গুলি করলো বিজিপি। এবার তাদের ছোড়া গুলিতে এক বাংলাদেশী কাঠুরিয়া গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
যে মুহুর্তে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ডিজি পর্যায়ের বৈঠক চলছে সেই মুহুর্তেও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি একেরপর এক গুলি করে হত্যা করছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। উচ্চ পর্যােয়ের বৈঠকের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধা না দেখিয়ে গত বুধবার বাংলাদেশী যাত্রী বহনকারী ট্রলারে গুলি বর্ষণের পর আজ বৃহস্পতিবার আবারো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বাংলাদেশী কাঠুরিয়াকে গুলি করলো বিজিপি। এ ঘটনায় বাংলাদেশ তরফ থেকে এখনো কোনো ধরণের প্রতিবাদ জানানোর খবর পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলীর ৪৭ সীমান্ত পিলার এলাকায় মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র গুলিতে এক বাংলাদেশী কাঠুরিয়া গুরুতর আহত হয়েছে । ১২ জুন দুপুর ১.৩০ ঘটিকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মায়ানমার সীমান্তবর্তী আশারতলী ৪৭ নং সীমান্ত পিলার এলাকায় আশারতলীর মির আহমদের পুত্র দিল মোহাম্মদ কাঠ কাটঁতে গেলে মায়ানমার বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিপি)’র ছেনছড়ি সেক্টরের আমতলী ক্যাম্প থেকে ৩-৪ রাউন্ড গুলি ছুড়েঁ । বিজিপি সদস্যের ওই গুলি দিল মোহাম্মদ কোমরের নিচে লাগে । মোট ৫টি গুলি তার গায়ে লেগেছে। ওই গুলির আঘাতে দিল মোহাম্মদের পুরুষাঙ্গের অন্ডকোষ ছিড়ে যায় । তার বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আশংকাজনক অবস্থায় দিল মোহাম্মদকে ৩ টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় । কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা, আব্দুস সালাম বলেন দিল মোহাম্মদের অবস্থা আশংকাজনক । তাকে বর্তমানে সার্জারী বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে । এ ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল সফিকুর রহমান বলেন, আশারতলীর ৪৭ নং সীমান্ত পিলার এলাকায় মিয়ানমার বিজিপি ১২জুন গুলিবর্ষণ করে । ওই গুলিবর্ষণে বাংলাদেশের এক নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয় ।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল টিমকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে বিজিপি। সেই সময় নিখোঁজ হন নায়েক মিজানুর রহমান। তাকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এর আগে গত ২৯মে এ ঘটনায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ মায়ো মিন্টথানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। একই সঙ্গে সীমান্তরক্ষীদের কাছে আটক বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমানকে অতি দ্রুত ছেড়ে দেয়ারও দাবি জানানো হয়। এরপর শুক্রবার নিখোঁজ বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানকে ফিরিয়ে দিতে বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক। এরপরই নাইক্ষ্যংছড়ির দোছাড়ি সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ৩০ জুন বিকালে বিজিবি সদস্য নায়েক মিজানুর রহমানের মরদেহ মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ৫২ সিমান্ত পিলার পাইনছড়ি এলাকা দিয়ে ফেরত দেয় । ওই দিন ফেরত দেয়নি নায়েক মিজানুর রহমানের সাথে লুট হওয়া ১টি এস.এমজি,৪টি ম্যাগজিন ও ১২০ রাউন্ড গুলাবারুদ । ওই দিন মায়ানমার সীমান্ত রক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ৫জুন পতাকা বৈঠকে ওই অস্ত্র ও গুলাবারুদ ফেরত দিবে বলে জানায়।
ওই ঘটনায় গত ৫জুন মিয়ানমারের মংডুতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নিহত বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমানের লুট হওয়া এসএমজি, চারটি ম্যাগজিন ও ১২০ রাউন্ড গোলাবারুদ ফেরত দেয় বিজিপি। ওই দিন মায়ানমার বিজিপি বৈঠকে সাম্প্রতিক ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে আখ্যা দেয় বিজিপি। ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসবাদ দমনে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন উভয় পক্ষ। ২৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল খন্দকার ফরিদ হাসান এবং মিয়ানমারের পক্ষে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের মংডুস্থ ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টাসের পরিচালক কর্নেল থিং কু কু।
এদিকে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী বৈঠক আজ শেষ হয়েছে এবং আজ রাতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে আসতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।