নামের মিল দেখিয়ে পরিচয়পত্র ও ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে হয়রানির অভিযোগ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক নারী তার স্বামীর নামের মিল দেখিযে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভূয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির মাধ্যমে প্রকৃত ওয়ারিশদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের ওয়ারিশ সদস্যরা বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডস্থ চিরিংগা মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাস্টার ওয়াজ উদ্দিন বিগত ১৯৮৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর চিরিংগা ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ নানা সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান রেখে গেছেন। তিনি মৃত্যুর সময় ৫ ছেলে ৫ কন্যা ও এক স্ত্রীসহ ১১ জন ওয়ারিশ রেখে যান। তৎমধ্যে দুই ছেলে এক কন্যা ও তাদের মা (ওয়াজ উদ্দিন মাস্টারের) স্ত্রী আমেনা বেগম মৃত্যু বরণ করেন। তাদের মৃত্যের পর মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ওয়ারিশান এখনো জীবিত রয়েছে। এসব ওয়ারিশগণ তাদের পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যার যার মতো করে ভোগদখলে আছেন।

মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে সাবেক মেম্বার নুরুল আলম জিকু ও সাবেক পৌরসভার কমিশনার নুরুল হোসেন কোম্পানি লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যের ৩৭ বছর পর এসে লোহাগাড়া সেনেরহাট নামক এলাকার লায়লা বেগম নামে এক নারী আমার পিতার স্ত্রী বলে দাবী করে নানা ধরণের হয়রানি করে যাচ্ছেন। চকরিয়া পৌরসভা কর্তৃক প্রদেয় পারিবারিক ওয়ারিশ সনদপত্রে মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ৫ ছেলে ৫ কন্যা ও এক স্ত্রীসহ ১১ জন ওয়ারিশ ছাড়া অন্যকোন মূল ওয়ারিশগন নেই বলে তারা দাবী করেছেন। লায়লা বেগম নামে যিনি মাষ্টার ওয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী দাবী করেছে তার ব্যাপারে তথ্য উদঘাটন করে জানতে পেরেছি সেনেরহাট এলাকায় স্থানীয় ১৭৮ নম্বর ক্রমিকে ভোটার এনআইডি কার্ডে স্বামীর নামের স্থলে ওয়াজেদ আলী নামে এক ব্যাক্তির নাম রয়েছে। এছাড়াও তার ব্যাপারে আরো নানা ধরণের তথ্যের মধ্যে গরমিল খুঁজে পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া আরো জানা গেছে, ১৯৬৩ ইং তারিখে ২৯ মার্চ লায়লা বেগম বাঁশাখালী উত্তর জলদী এলাকার আবদুল জলিলের পুত্র বজল আহমদের সাথে নিকাহনামা সম্পাদিত হয়। বর্তমানে তার বিবাহ উক্ত নিকাহনামামূলে আবদ্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে লায়লা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫১৪৭১৮৪৯০৩৭৭ ভোটার এনআইডি কার্ডে স্বামী ওয়াজেদ আলীর জায়গায় অনিয়মের মাধ্যমে ওয়াজেদ আলী নাম পরিবর্তন করে তৎস্থলে আমাদের পিতা ওয়াজ উদ্দিন মাস্টারের নাম বসিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে চকরিয়া পৌরসভা থেকে লায়লা বেগম মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবী করে একটি ওয়ারিশ সনদ ইস্যু করে নেয়।

এই বিষয়টি জানতে পেরে পৌরসভা কর্তৃক ইস্যুকৃত লায়লা বেগমের ওয়ারিশ সন্দপত্রটি বাতিল চেয়ে মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে নুরুল আলম জিকু গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখ পৌরসভার মেয়র বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌরসভার কর্মকর্তারা বিষয়টি যাচাই-বাচাই এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করেন। তদন্তে লায়লা বেগম নামে মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর কোন ধরণের সত্যতা না পেয়ে রিপোর্টের ভিত্তিতে লায়লা বেগমের নামে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদপত্র আদেশ সহকারে গত ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখ বাতিল ঘোষনা করেন। যাহা স্মারক নং-চক/পৌ:/২২/২০২১/৩০২।

ভুক্তভোগী নুরুল আলম জিকু বলেন, চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে লায়লা বেগমকে বিবাদী করে অপর ১৭৫০/২১ মামলা দাযের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত গত ১৬ মার্চ ২০২২ ইং তারিখের ০৭ নাম্বার আদেশে উক্ত লায়লা বেগমকে ওয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী নই মর্মে আদেশ জারী করেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ হয়ে লায়লা বেগম জেলা দায়রা জজ আদালতে মিচ আপীল মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ২৭ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখে ০৬ নাম্বার আদেশমূলে লায়লা বেগমকে ওয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী নই মর্মে পূর্বের আদেশ রহাল রাখেন।

সাবেক কমিশনার নুরুল হোসেন বলেন, বর্তমানে উক্ত আদালতে রিভিশন মামলা চলমান রয়েছে। মূলত কতিপয় ভূমিদস্যুরা মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ওয়ারিশগণের সম্পত্তি গ্রাস করার কুমানসে নানা ধরণের চক্রান্ত করে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মেতে উঠেছে। লায়লা বেগম নামে তাদের পিতার কোন ওযারিশ নেই বলে দাবী করেছেন। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ওয়ারিশ ও তাদের পরিবারের অপরাপর সদস্যরা ওই মহিলার বিভ্রান্তি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসনকে কোন ধরনের বিভ্রান্ত না হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে এস এম নুরুল আলম (জিকু), তার ভাই সাবেক কমিশনার নুরুল হোছাইন কোম্পানি, অপর ভাই নুরুল ইসলাম কোম্পানি, তাদের বোন জান্নাত আরা বেগম। এছাড়াও মাস্টার ওয়াজ উদ্দিনের নাতি শাহাব উদ্দন সাগর,জিয়াউদ্দিন মো: জিন্নাহ ও এডভোকেট সাদ্দাম হোসেন নিশানসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, ওয়ারিশ, তৈরি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন