নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় কোনঠাসা ইউপিডিএফ : বিকল্প পথে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা

Khagrachari Pic 06

বিশেষ প্রতিনিধি:

নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়া পাহাড়ের সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) ফের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পিকনিকসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের অন্তরালে চলছে তাদের দেশের স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী তৎপরতা। জেলার পানছড়ির গহীন অরন্যে তেমনী একটি তৎপরতা শনিবার ভোর রাতে পন্ড করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ১০ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের জামতলী এলাকায় ইউপিডিএফ’র সামরিক শাখার প্রধান প্রদীপন খীসার বাসায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাধারন মানুষের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদার প্রায় ৮০ লাখ টাকা ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় পরবর্তি করণীয় নির্ধারণ করতে গত ১১ জানুয়ারি ভোর রাতে তারাবন্যার পাশের গ্রাম বাঘ্যাপাড়ায় উদঙ্গ মনি চাকমার বাড়ীতে ইউপিডিএফ নেতারা বৈঠক বসে।

সূত্রমতে, বৈঠক নির্বিঘ্ন করতে বৈঠক স্থলের চারপাশে অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত সশস্ত্র ক্যাডার পাহারা বসায়। কিন্তু গোপন সূত্রে, বিষয়টি টের পায় নিরাপত্তা বাহিনী।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, পিকনিকের অন্তরালে ইউপিডিএফ’র নীতি নির্ধারণী বৈঠকের খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি সদর জোনের সেনা বাহিনী, লোগাং বিজিবি ও পানছড়ি পুলিশের সমন্বয়ে একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে অভিযানে যান। কিন্তু অভিযানের খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আর পিকনিকের অন্তরালে ডাকা গোপন বৈঠকটি পন্ড হয়ে যায়।

Khagrachari Pic 08

পরে যৌথ দলটি বৈঠক স্থল থেকে জেনারেটর ও পানির পাম্পসহ বেশ কিছু তৈজসপত্রসহ স্থানীয় কয়েক জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ঐ বৈঠকে প্রায় অর্ধশতাধিক সশস্ত্র ইউপিডিএফ সদস্যের জন্য খাবারের আয়োজন ছিল। কিন্তু যৌথ বাহিনীর অভিযান টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। ফলে ঐ সব খাবার দিয়ে স্থানীয়রা পিকনিক করে।

অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ঘটনাস্থলে কাউকে আটক করতে না পারলেও অভিযান চলমান থাকবে।

এ দিকে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপন খীসা আজ শনিবার এক বিবৃতিতে দাবী করে, পানছড়িতে স্থানীয় মুরুব্বীদের আয়োজিত গণ পিকনিক নিরাপত্তা বাহিনী ভন্ডুল করে দিয়েছে।

তার দাবী, ১১ জানুয়ারি ভোর রাত ৪টার দিকে যৌথ বাহিনীর একটি দল প্রথমে তারাবন্যার পাশের গ্রাম বাঘ্যাপাড়ায় উদঙ্গ মনি চাকমার বাসায় যায়। পরে সেখান থেকে তাকে ও তার বাড়িতে অবস্থানরত পিকনিকের জন্য লতিবান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী নেতা শান্তি জীবন চাকমা, উল্টাছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত চাকমা ও মারমা ঐক্য পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল মারমাকে নিয়ে জগপাড়ার পাশে পিকনিক স্পট ঘেরাও করে।

কিন্তু সচেতন মহলের প্রশ্ন, এ আয়োজন যদি পিকনিক হয়ে থাকে, তাহলে তা গহীন অরণ্যে ও ভোর রাতে কেন?

তবে একটি সূত্র জানানয়, সম্প্রতি সশস্ত্র ইউপিডিএফ’র উপদেষ্টা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা ও ইউপিডিএফর শীর্ষ নেতা উজ্জল স্মৃতি চাকমা পাঁচ সহযোগিসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আটক ও অধিকাংশ নেতা মামলার আসামী হওয়ায় এবং সর্বশেষ যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ শীর্ষ নেতা প্রদীপন খীসার বাসা থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার হওয়ায় ইউপিডিএফ সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে।

তাছাড়া অধিকার আদায়ের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি এমন কি স্ব-জাতির উপর নানাভাবে নিপিড়ন-নির্যাতনের ঘটনায় ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছেও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ইউপিডিএফের ঠকবাজি বুঝতে পেরে পাহাড়িরা ইউপিডিএফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে ফের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এ ক্ষেত্রে দূর্গম এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়িরা অনিচ্ছা সত্বেও বাধ্য হয়ে ইউপিডিএফ আশ্রয় দিতে হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন