ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা উচিত: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

fec-image

ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষক সংসদীয় ককাসের’ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ক্লাবের মিলনায়তনে ‘বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

এসময় মন্ত্রী বলেন, ‌‌‌‘সরকার দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে কাজ করছে। কেউ সহিংসতার মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে গেলে তা ঠিক হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের একার নয়। চুক্তিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, সরকারি কর্মকর্তা সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। চুক্তি অনুসারে অনেক কাজ হয়েছে।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শান্তিচুক্তি যেটুকু বাস্তবায়ন হয়নি, তার জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই উদ্যোগ নিতে হবে। সহিংসতা কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। সমস্যা জিইয়ে না রেখে তা সমাধানের জন্য সব পক্ষকে কাজ করতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আন্তরিকতায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করা গেলে নিশ্চয়ই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু দুখ:জনক হলেও সত্য যে, চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নি। পার্বত্য এলাকা আরো বড় সংঘাতের দিকে গেলে তা দেশের জন্য সুখকর হবে না, তা শুভ লক্ষণ নয়।’

ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। গোলটেবিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‌‘কুকি-চীন তো এমনে এমনে হয় নি। কুকী-চীন তৈরী করা হয়েছে। এখন বিড়াল বাঘ হয়ে গেছে। পৃথিবীব্যাপী বহুত্ববাদের ধারণা সংকুচিত হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় জিয়াউর রহমান এই বহুত্ববাদী সমাজ ধারণার বিপরীতে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যা সঠিক ছিল না।”

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, ‘শান্তিচুক্তির সময় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলাম। আমার মনে হয়, চুক্তি কালীন সময়ে যে একটা আস্থার সম্পর্ক ছিল, সেটা এখন অনেকাংশে কমে গেছে। এই আস্থার সম্পর্ক টা ফিরিয়ে আনতে হলে উভয় পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার মনে হয় না যে, পার্বত্য চুক্তির কোন একটি ধারাও অবাস্তবায়নযোগ্য।’

আ. ক. ম ফজলুল হক এমপি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তুলনায় সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে অনেকেই জমি হারাচ্ছেন। সমতল ভূমির আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা উচিত।’

আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিকায়নকে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে একরের পর একর ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।’

গোলটেবিল বৈঠকের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ককাসের সমন্বয়ক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, ‘বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্য ধারণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। কারও অস্তিত্ব বিলীন করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যাবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বৈচিত্রকে অস্বীকার করে যখনই একীকরণ করার চেষ্টা করা হয়, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সারা পৃথিবীতে কম করে হলেও ৩৭ কোটি আদিবাসী রয়েছে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ জীববৈচিত্রই রক্ষা করেছে আদিবাসীরা।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, ‘এদেশের সংবিধান রচনার সময়ে আমরা বৈচিত্রকে স্বীকার করতে পারি নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা ও করা হয় নি।’

আলোচনায় আরো অংশ নেন ইউএনডিপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রসেনজিত চাকমা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেশ মাঝি। পরে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পীযূষ বর্মণ, হেলেনা তালাং, নমিতা চাকমা, রমেশ কোচ, সুভাষ চন্দ্র রাজবংশী ও দিলীপ রবিদাস। সঞ্চালনা করেন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভের সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ-ফেরদৌসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন