পানছড়িতে গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ
শাহজাহান কবির সাজু:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় দেড় কি: মি: রাস্তা নির্মাণ করে গড়ে তুলল এক বিরল দৃষ্টান্ত। মঙ্গলবার সাত সকাল থেকেই গ্রামবাসীরা রাস্তা তৈরীর কাজ করছে।
রাস্তা তৈরীর খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩নং সদর পানছড়ি ইউপির ইটখোলা এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা ব্যস্ত সময় পার করছে রাস্তা নির্মাণে। কেউ আগাছা পরিষ্কার, কেউ গাছ কাটা, কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কাটছে সাথে গোমটা টেনে যোগান দিচ্ছে এলাকার গৃহবধুরাও।
সকাল ৯টার চা বিরতির এক ফাঁকে আলাপ হয় কর্মরত আ: হাকিম (৬৫), আ: খালেক (৬৪), সুলতান আহাম্মদ (৫০) আবু সিদ্দিক, ক্যাউসাই মারমা, জোহরা, হাসিনা, রোজিনা, হারিস মিয়া ও মালেকসহ অনেকের সাথে। তারা জানায় এই গ্রামে প্রায় ৩ শতাধিক লোকের বসবাস। বিগত ২৫/৩০ বছর যাবৎ এখানে কোন রাস্তা ছিল না। কোমর সমান পানি আর কাঁদার মধ্যে দিয়েই ছিল অসহায় গ্রামবাসীর চলাচল। তাই মনোয়ারা বেগম উদ্যোগ নিয়ে আমাদের উৎসাহের যোগান দিলে আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি।
এই রাস্তা নির্মাণের জন্য কেউ জায়গা দিয়েছে, কেউ বড় বড় গাছও উপড়ে ফেলেছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে দুই/তিন কিলো রাস্তা পাড়ি দিতে হতো আবার কেও ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতেও চাইত না। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা আর মনোয়ারা বেগমের উদ্যোগেই গ্রামবাসীরা মিলে রাস্তাটি তৈরী করেছি।নেতারা একটু নজর দিয়ে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে যদি রাস্তাটি ইট সলিং করে দেয় তাহলে হয়তো এটির স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে।
তবে অনেকেই অভিযোগের তীর ছুড়লেন ইটখোলা হয়ে তালুকদারপাড়া, পানছড়ি বাজার সংযোগ সড়কে তালুকদার পাড়া মসজিদ সংলগ্ন ব্রীজ নির্মাণ নিয়ে। তাদের দাবী জনচলাচলের জন্য ব্রীজ নির্মাণ করলেও দু’পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। তাই জনচলাচল যেমনি বন্ধ তেমনি দু’পাশেই ধরেছে বিশালাকার ভাঙ্গন । এ মুহুর্তে দু’পাশে মাটি ভরাট করা না হলে আমাদের স্বেচ্ছায় নির্মাণ করা রাস্তাটিও কোন কাজে আসবে না।
এই ব্রীজ নির্মাণকারী ঠিকাদার রফিক সওদাগরের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমার এখানে আর কোন কাজ নেই। আপনি এলজিইডি প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন।
এলজিইডি প্রকৌশলী মো: আনোয়ার হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, দু’এক দিনের মধ্যেই ব্রীজের দু’পাশে মাটির ভরাট করা হবে। আরইআরএমপি শ্রমিকরা খুব সহসাই মাটি ভরাটের কাজে হাত দেবে বলে তিনি জানান।
তবে গ্রামবাসীর দাবী উপজেলার অতি নিকটে হওয়া সত্বেও উন্নয়নের দিক থেকে গ্রামটি অনেক পিছিয়ে আছে। এলাকার কোমলমতি শিশুদের সু-শিক্ষিত করার লক্ষে তাদের স্বেচ্ছায় তৈরী কাঁচা রাস্তাটি ইট সলিং করার ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য স্থানীয় প্রাশসনসহ নেতাদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।