পানছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের জয়নালের মিটার বানিজ্য

fec-image

সেদিন ছিল ১০ অক্টোবর। রাত আনুমানিক দশটা। ০১৮৫১৯৪৬৬৬৯ নাম্বার থেকে এই প্রতিবেদকে ফোন করে বলে আমি ইউছুফ বলছি। দৈনিক কালের কন্ঠের ক্রাইম রিপোর্টার আগ্রাবাদ এলাকায় কাজ করি। তবলছড়ির মিটার রিডার জয়নাল আমার কাছের আত্মীয় তার বিরুদ্ধে নিউজ করার দরকার নাই। এতোদিন যা করেছে ভুল হয়েছে আজ থেকে আর ভুল হবেনা। এই প্রতিবেদক তাকে কোন পত্রিকায় কাজ করেন পূনরায় জানতে চাইলে কথা ডান-বাম করার চেষ্টা চালান। জয়নাল পানছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি এলাকার মিটার রিডার। তার বিরুদ্ধে মিটার বসিয়ে দেয়া ও নিয়মনীতি না মেনে খুঁটি থেকে বিশাল দুরত্বে অবৈধ সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মিটার প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার নিয়ে বছরের পর বছর ধরে অসহায় গ্রাহকদের সে বোকা বানাচ্ছে। তাছাড়া গ্রাহকদের অফিসমুখী না করে গ্রামে বসিয়ে রেখেই চালিয়ে যাচ্ছে এসব বানিজ্য। মুসলিমপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন জানান, মিটারের জন্য ৫ হাজার খুঁটির জন্য ৩ হাজার দিয়েছি। অন্য লোক থেকে আরো বেশি নিয়েছে। আনোয়ার হোসেন জানান, এলাকায় বিদ্যুতের খুটি নেই। তারপরও জয়নালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে এলাকায় বিদ্যুৎ নিয়েছি।

ডাক বাংলা বাজারের মজল হক জানান, আমি সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে মিটার নিয়েছি জয়নালের মাধ্যমে। সরেজমিনে গিয়ে পুরো এলাকাতেই জয়নালের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলে যা এই প্রতিবেদকের নিকট গ্রাহকদের অভিযোগের ভিডিও চিত্র ধারণ করা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জয়নালের সাথে কথা বলতে চাইলে মোবাইল রিসিভ করেনা। মাঝে মধ্যে অন্য নাম্বার থেকে ফোনে দিলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের “ফিডার বি” ইমাম হোসেন এসব অপকর্মের মূল হোতা। পানছড়িসহ তবলছড়ি ও তাইন্দং এলাকায় তার ইশারাতেই চলে সব কিছু। জয়নালের সাথে আঁতাত করে দীর্ঘবছর চালিয়ে যাচ্ছে এসব বানিজ্য। অথচ ২০১৯ সালের শুরুতে ইমাম হোসেনকে অন্যত্র বদলী করা হলেও আজো পানছড়ির কর্মস্থলে কাজ করছে।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে সকালে এসে দুইটার পর কর্মস্থল ত্যাগ করে সে ওভার টাইমসহ নানান সুবিধা ভোগ করছে। ইমাম হোসেনের বদলীর ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানায়, জাফর স্যারের আমলে আমার বদলি হলেও অফিশিয়ালভাবে আমাকে ছাড়া হচ্ছেনা। জানা যায়, পানছড়ি বিদ্যুতের কর্মচারিরা ২০১৭ সালে অফিস চালুর পর থেকে অদ্যবধি একি কর্মস্থলে রয়েছে। সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়া তো দুরের কথা তাদের কখনো খুঁটির আশে-পাশে যেতেও দেখা যায়নি। এলাকায় গুটি কয়েক লোক দিয়ে খুঁটি থেকে শুরু সব ধরণের কাজ করিয়ে নেয়।

তবলছড়ি জয়নালের ব্যাপারে জানতে চাইলে পানছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আলী আজগর জানান, জয়নালের কাজ হলো বিদ্যুৎ বিল দেয়া আর নেয়া। মিটারের জন্য টাকা নেয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেননা। পানছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আবাসিক প্রকৌশলী মো: রাশেদুল ইসলাম জানান, আমি সদ্য যোগদান করেছি। আপনি খাগড়াছড়ি অফিসে আসেন বা পানছড়ি অফিসে এলে কথা বলবো।

সম্প্রতি তবলছড়ি মাদ্রাসাপাড়ায় ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে জয়নালের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকার দর কষাকষি চলছে। ভুক্তভোগীদের দাবী তবলছড়ি ও তাইন্দং নিয়ে বিশাল এলাকা। এই এলাকার কর্ণধার জয়নাল। তার ইশারাতে এলাকার কয়েকজন মিলে ওয়ারিং থেকে মিটার স্থাপনের সব কাজ সম্পন্ন হয়। গ্রাহকেরা বাধ্য হচ্ছে করাতে। তাই উল্লেখিত এলাকায় একটি বিদ্যুৎ অফিস স্থাপন করা হলে এলাকার সাধারণ জনগন অন্তত অভিযোগ হলেও করতে পারবে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছে ভুক্তভেগীরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পানছড়ি, বিদ্যুৎ বিভাগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন