পাহাড়ী-বাঙালী সংস্কৃতির মিশেলে খাগড়াছড়িতে রেকর্ডকৃত ইত্যাদির সম্প্রচার আগামীকাল

13627_10153078811771591_2344718264753052643_n
স্টাফ রিপোর্টার :
‘ইত্যাদি’র এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে পার্বত্য জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত খাগড়াছড়িতে। গত ১৯ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে চারিদিকে পাহাড় বেষ্টিত চেঙ্গী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব মাঠে ধারণ করা হয় এবারের ‘ইত্যাদি’। বাংলাদেশের যখন যে স্থানে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হয় সেই স্থানটির বৈশিষ্ট্য কেন্দ্র করেই সেট নির্মাণ করা হয়। ফলে দর্শক যেমন ঐ স্থানটি সম্পর্কে জানতে পারেন, তেমনি নিত্য-নতুন লোকেশনের কারণে প্রতিবারই সেট নির্মাণেও বৈচিত্র্য আসে। এবার খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মাণ করা চোখ জুড়ানো আলোকিত মঞ্চের সামনে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ধারণ করা হয় ‘ইত্যাদি’। এতদিন দর্শক দেখেছেন পাহাড়ের দিনের সৌন্দর্য-এবার দেখলেন রাতের সৌন্দর্য।
‘ইত্যাদি’র ধারণ উপলক্ষে পাহাড় কন্যা খাগড়াছড়িতে ছিল উৎসবের আমেজ। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপভোগ করেন। শেকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’র এই ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
ittadi-1422363087
ফাগুন অডিও ভিশন জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইত্যাদির বিশাল বহর নিয়ে এতদূরে গিয়ে অনুষ্ঠান করা ছিল কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও দর্শকের কথা চিন্তা করে সকলের সহযোগিতায় ইত্যাদি নির্ধারিত স্থানে ধারণ করা হয়। শেকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে তাদের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের এসব কাজ দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এবারের পর্বেও রয়েছে তেমনি কয়েকটি হৃদয়ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে শিক্ষানুরাগের এক জীবন্ত প্রতীক রিকসা চালক মো. জাকের হোসেনের উপর একটি শিক্ষণীয় প্রতিবেদন।
এছাড়াও প্রায় ত্রিশ বছর ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জায়গা যিনি সবুজ করে তুলেছেন চির সবুজ বকুল ফুলে গাছ দিয়ে এবং সুরভিত করেছেন গোটা অঞ্চল, সেই ভূমিহীন দিনমজুর সিদ্দিক গাজীর উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। একজন সরকারি কর্মচারী মাগুরার এবিএম নজরুল ইসলামের নিষ্ঠা এবং কর্মনিষ্ঠার উপর রয়েছে একটি উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিবেদন। যিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনে কোন অজুহাতেই কখনও কোন নিয়ম ভঙ্গ করেননি।
এছাড়াও পাহাড়ী কন্যা রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালীর উপর রয়েছে একটি চমৎকার তথ্য ভিত্তিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে সাজেকের অনেক অজানা রূপ। আসলে খাগড়াছড়িতে এমন এমন দুর্গম অঞ্চলও রয়েছে যেখানে টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণতো দূরের কথা, কোন টিভি ক্যামেরাও কখনও পৌঁছেনি। এবারের ইত্যাদিতে মূল গান রয়েছে একটি।
উল্লেখ্য ইত্যাদিতে সবসময় ভিন্ন আঙ্গিকে বিষয় ভিত্তিক গান প্রচার করার চেষ্টা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে বন্ধন এবং আমাদের দেশের রূপ-বৈচিত্র্য বর্ণনা করে একটি দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এ্যান্ড্রু কিশোর। খ্যাতিমান গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের এই কথায় গানটিতে সুর দিয়েছেন আলী আকবর রূপু। গানটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন নান্দনিক লোকেশান, সাজেক ভ্যালীর বিভিন্ন স্পটে এবং মঞ্চে দর্শকদের সামনে ৩ দিন ধরে ধারণ করা হয়। গানটির সঙ্গে কোরিওগ্রাফি করেছেন স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরা। এছাড়াও এবারের অনুষ্ঠানে রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী নাচ। যাতে অংশগ্রহণ করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ী সম্প্রদায় এবং বাঙালী নৃত্যশিল্পীরা। চাকমা-ত্রিপুরা-মারমা ও বাংলা ভাষায় গাওয়া একটি দেশের গানের সঙ্গে এই নাচটিতে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পী।
দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী যেই স্থানে ইত্যাদি ধারণ করা হয় সেই স্থানকে ঘিরে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় এবং সঠিক উত্তর দাতাদের দিয়ে করা হয় ২য় পর্ব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। খাগড়াছড়িকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝ থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সাথে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় জুম নৃত্য, বোতল নৃত্য ও বাঁশ নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ২য় পর্বে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও রয়েছে যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ। রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। নিয়মিত অনিয়ম, নববর্ষের আতঙ্ক, শিশুর মায়ের শিশুসুলভ আচরণ, দেশী টিভি চ্যানেলের জন্য চ্যালেঞ্জ, শীতের পিঠার দুর্গতি, ব্যতিক্রমী সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র আগামী পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে-এ প্রচার হবে ৩০ জানুয়ারি, শুক্রবার রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর। ‘ইত্যাদি’র রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ‘ইত্যাদি’ স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন