পাহাড়ে দুই কিশোরী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ

আবু সালেহ আকন:

পাহাড়ে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হলেও গত এক মাসেও ঘটনার ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। এ দিকে স্থানীয় প্রশাসন বলেছেন, ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। অথচ একটি পক্ষ এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পুরো পাহাড়কে অশান্ত করে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানকে বিঘ্ন করতেই এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। তারা এই অভিযোগ তুলে পাহাড়কে অশান্ত করতে চায়। সম্প্রতি পাহাড়ে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযানে ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে অনেক সন্ত্রাসী। উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র।
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে দুই মারমা কিশোরীকে একসঙ্গে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগ এনে পোশাকি বাহিনীকে অভিযুক্ত করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন চাকমা সার্কেলের চিফ দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিণী ইয়ান ইয়ান। তার সঙ্গে সহযোগিতায় রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীবিরোধী পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠন ও সশস্ত্র সংগঠনগুলো। কিন্তু এই ঘটনার কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। দুই মারমা কিশোরী বা তাদের পিতামাতার পক্ষে গত এক মাসেও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। ওই দুই কিশোরী আপন বোন। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের না করায় পুলিশ নিজ উদ্যোগে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ওই তদন্তে ধর্ষণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

রাঙ্গামাটির এসপির সাথে গত রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না তা ডাক্তারের রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে। ডাক্তারের রিপোর্ট এখনো হাতে পৌঁছেনি। তিনি বলেন, ডাক্তার ওই প্রতিবেদন আদালতে প্রদান করবেন। আর আদালত থেকে তা পুলিশকে দেয়া হবে।
অভিযোগকারীদের বক্তব্য ঘটনাটি ঘটেছে গত ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের উরাছড়ি গ্রামে। ওই দিন নিরাপত্তাবাহিনীর নেতৃত্বে আনসারসহ একটি দল উরাছড়ি গ্রামের পাহাড়ের টিলায় পাঁচটি বাড়ি নিয়ে বসতি এলাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের শুরুতে পাহাড়ের ওই টিলায় উয়েশিং মারমার বাড়িতে অভিযান চলে। বাড়িটির দুই অংশ ছিল বেড়ার। অপর দুই অংশ ছিল সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। বাড়িতে ছিল কিশোরী দুই বোন। আর ছিল তাদের দুই বছরের ছোট ভাই। বাবা উয়েশিং মারমা ও শুক্রাচিং মারমা ছিলেন জুম চাষের জন্য খামার এলাকায়। অভিযোগ করা হয়, নিরাপত্তাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অভিযানের নামে বড় বোনকে ধর্ষণ ও ছোট বোনকে শ্লীলতাহানি করেছে। ঘটনার সময় এই দুই সহোদর চিৎকার করলে পাশের অপর চারটি বাড়ির লোকজন এগিয়ে যায়। পরদিন ঘটনাটি প্রশাসনের কানে পৌঁছলে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যান। কিন্তু ২২ জানুয়ারি থেকে প্রায় ৩০ ঘণ্টা এই দুই মারমা কিশোরী উধাও থাকে। ২৩ জানুয়ারি পাহাড়ি কিছু লোক এই দুই বোনকে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। চাকমা সার্কেলের চিফ দেবাশীষ রায়ের স্ত্রী ইয়ান ইয়ান ও অন্যান্য পাহাড়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ অনুযায়ী গঠিত হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এ বোর্ডের ডাক্তারদের মধ্যে দুইজন ছিলেন বাঙালি আর তিনজন ছিলেন পাহাড়ি। তাদের প্রদত্ত রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। এ অবস্থায় সার্কেল চিফের স্ত্রীসহ অন্যরা অতি উৎসাহী হয়ে দুই বোনকে তাদের জিম্মায় নিতে চায়। তাদের পিতা উয়েশিং মারমা উচ্চ আদালতে গিয়ে তার দুই মেয়েকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার আবেদন জানালে আদালত তা গ্রহণ করে। এর পর থেকে তারা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য অভিলাস তংচঙ্গার রিজার্ভ বাজার এলাকায় বাসায় রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য ১০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে উরাছড়ি গ্রামের এই অভিযানটির নাম ছিল ‘কর্ডন অ্যান্ড সার্চ’। সেনা ও আনসার নিয়ে ছিল ১৫ সদস্যের একটি দল। এর আগের দিন ওই এলাকা থেকে দুই সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়। তথ্য ছিল পাহাড়ের টিলার ওই বাড়িগুলোতে সন্ত্রাসীদের অবস্থান রয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। ফলে অভিযানটি চালানো হয়। কিন্তু অভিযানের শুরুতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আভিযানিক দলটি। দুই মারমা বোনের একজন কেন চিৎকার করেছে এবং পরে তারা বা তাদের পরিবারের পক্ষকে বাদ দিয়ে অন্যরা কেন অতি উৎসুক হয়ে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের কোনো কৌশল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিলাইছড়ি থানার ওসি আহম্মেদ নাসির উদ্দিন গত রাতে বলেছেন, ঘটনার ব্যাপারে তারা কোনো সত্যতা পাননি। তবে এই বিষয়টি পাহাড়িদের একটি অংশ বিশেষ করে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মেনে নিতে নারাজ। তারা পাহাড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও মেনে নিতে পারছে না। যে কারণে কৌশলে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদেরকে বিপদে ফেলার জন্য এই অভিযোগ আনা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এই সশস্ত্রগ্রুপগুলো বছরের পর বছর পাহাড়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে। নিরাপত্তাবাহিনী ও স্থানীয় সিভিল প্রশাসন প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে। যে কারণে তারা প্রশাসনের ওপর বরাবরই ক্ষিপ্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

সূত্র: নয়া দিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন