চাল-মুরগি ও চাঁদাবাজ হরদম

পেকুয়ার নূর হাসপাতালের ভুল রিপোর্ট, দায়সারা প্রতিবেদন তদন্ত কমিটির

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় রোগীকে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগের দায়সারা প্রতিবেদন নিয়ে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত এ অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী রোগী ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. শিবলী সাদেক।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই অসুস্থতা নিয়ে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহমিদুল ইসলামের কাছে যান পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মিয়া পাড়া এলাকার মাহবুব আলমের ছেলে ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী শিবলী সাদেক। ডাক্তারের পরামর্শে তিনি ইউএসজি অব ডাবলিইউ, সিবিসি ও ইউরিন আর/ই পরীক্ষা করাতে পেকুয়া সদরের নূর হাসপাতালে যান। সেখানে তার রিপোর্টে সিএলডি ও ফেটি সেইন্স ইন দ্যা লিভার উল্লেখ করেন। রিপোর্ট দেখে ডাক্তারের কথা শুনে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে ডা. তাহমিদুল তাকে ডিএনএ ও এন্ডোসকপি পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম পাঠান। সেখানে গিয়ে এসব পরীক্ষা করিয়ে তিনি ডা. মুশফিকুল আবরারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তারের পরামর্শে চট্টগ্রামের সিগমা ল্যাব থেকে পুনরায় ইউএসজি অব ডাবলিইউ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে রিপোর্ট আসে নরমাল। যা নূর হাসপাতালের সম্পূর্ণ বিপরীত।

ভুক্তভোগী শিবলী সাদেক বলেন, পরীক্ষার রিপোর্ট ভুল দেওয়ার কারণে আমি ভুল চিকিৎসার শিকার হতে যাচ্ছিলাম। তাই আমি সুস্থ হয়ে এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। এর প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় ডা. তাহমিদুল ইসলামকে। কিন্তু ২০ দিন পরে উক্ত কমিটি দায়সারা একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ভুল রিপোর্ট দেওয়া ল্যাবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ না করে তদন্ত প্রতিবেদনে আমাকে সহানুভূতি জানানো হয়। এছাড়া পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. মহিউদ্দিন মাজেদ চৌং আমাকে আপোষ মীমাংসার প্রস্তাব দেন। নুর হাসপাতালের পরিচালক মোরশেদ আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বার্থে কক্সবাজারের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কারণ নূর হাসপাতালের প্রকৃত মালিক ও পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মুজিবুর রহমান যথেষ্ট প্রভাবশালী। তিনিই প্রাথমিক তদন্ত প্রভাবিত করে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি অভিযোগ করেছি নূর হাসপাতালের বিরুদ্ধে, কিন্তু তদন্ত কমিটি পেকুয়া সকল হাসপাতালকে উদ্দেশ্য করে কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশনা বা সুপারিশ দেয়নি। তাদের নামও নেয়নি। তা আমাকে হতবাক করেছে। নূর হাসপাতালের ভুল রিপোর্টের জন্য আমি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। তাদের ভুল রিপোর্টে পেকুয়া আরও অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. তাহমিদুল ইসলাম বলেন, তদন্তে যা পেয়েছি, আমরা সেভাবে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। নূর হাসপাতালকে উদ্দেশ্য করে দুটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তাদের নাম উল্লেখ না করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। আমাদের ওপর কোন চাপ ছিল না। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহিউদ্দিন মাজেদ চৌং বলেন, আপোস মীমাংসার কোন প্রস্তাব অভিযোগকারীকে দেয়া হয়নি। আমরা তদন্ত করেছি। এতে সে সন্তুষ্ট না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে পারে। সেখানে আরেকটি তদন্ত হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে নূর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন