পেকুয়ায় স্বামীর নির্যাতনে শিশু সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে গৃহবধূ

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় স্বামী ও তার ভাইদের সীমাহীন নির্যাতন ও হুমকিতে একমাত্র শিশু সন্তান রাব্বিকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রিনা আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূ।

স্বামী সরওয়ার উদ্দিনকে পিতার বাড়ি থেকে বেশ কয়েকবার যৌতুক হিসাবে টাকা এনে দেয়ার পরও আবারও যৌতুকের টাকা এনে না দেয়ায় গৃহবধুকে নির্যাতন চালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী রিনা আক্তারের।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ উপজেলার টৈটং ইউপির বদু হাজির পাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী ফজল করিম ও আমেনা বেগমের মেয়ে। গৃহবধূকে নির্যাতনকারী সরওয়ার উদ্দিন একই এলাকার মৃত কাছিম আলীর ছেলে।

ভুক্তভোগী রিনা আক্তার বলেন, ২০১৮ সালে আমার এইচএসসি পরিক্ষা চলাকালীন কিছু আগে পরিবারের পক্ষ থেকে একই এলাকার সরওয়ার উদ্দিনের সাথে আমার বিবাহ দেন। বিবাহের ৮লাখ টাকা দেনমোহরের মধ্যে ৩ লাখ টাকা নগদ আর ৫ লাখ টাকা বাকী উসুল হিসাবে ধার্য্য হয়। ওই সময় কাজি মাহামুদুল হক আমার পরিবার থেকে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত দাবি করলে তা না দেয়ায় স্বামী সরওয়ারের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কাবিন ৬ লাখ টাকা হিসাবে কাবিননামায় উল্লেখ করেন। এ ঘটনা আমলে না নিয়ে সংসার করার চেষ্টা করলেও স্বামী সরওয়ার উদ্দিন বারবার টাকার দাবীতে মারধর করে আমাকে। বিদেশ যাওয়ার কথা বলে একে একে পিতার বাড়ি থেকে ৩লাখ টাকা এনে দেই স্বামী সরওয়ারকে। এমনকি স্বামীর সাথে তার ভাই গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, জয়নাল আবদীন ও বোনের জামাই জালাল করিম সংঘবদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকবার আমাকে মারধর করে ঘরে বন্দি করে রাখে। এক পর্যায়ে আমার রক্ষিত ৪ ভরি স্বর্ণও বিক্রি করে দেন স্বামী। ইতিমধ্যে ছেলে সন্তান জন্ম নিলে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের অত্যাচার নিরবে সহ্য করে সংসার করার চেষ্টা করেছি। কারণ আমার পিতা ও ভাইয়েরা প্রবাসে অবস্থান করায় স্বামীর পরিবার প্রভাবশালী ও দাঙ্গাবাজ হওয়ায় মাও তাদের কাছে অসহায় ছিল।

এরই মাঝে টৈটং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বরাবর তারা আমার বিরুদ্ধে একটি সালিশ দায়ের করলে সালিশকারগণ সাক্ষীপ্রমাণ নিয়ে একটি রায় প্রদান করেন। তাতে আমার ধার্যকৃত কাবিন ৮লাখ টাকা করে দেয়া ও স্বর্ণ ৪ ভরি দিয়ে দিবে বলে অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষর করেন। এরপরও স্বামী বারবার যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকে। সর্বশেষ ৮জানুয়ারি স্বামীসহ উল্লেখিত ব্যক্তিরা আমাকে মারধর করে ঘরে বন্দি করে রাখে। ৯ জানুয়ারি আহত অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর আমার পরিবারের পক্ষ থেকে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেন।

তিনি আরও বলেন, এদিকে শিশু সন্তানসহ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েও তারা শান্ত না হয়ে চাচা ফজল কাদেরকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। মাকে বারবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমাকে হত্যা করে শিশু সন্তানকে নিয়ে যাবে। যার কারণে আমি পিতার বাড়িতেও থাকতে পারছিনা। ১৬ মাসের শিশুকে নিয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এমনকি যেখানে আমার বিচার দেয়ার কথা সেখানে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে আবারও আমার বিরুদ্ধে বিচার দায়ের করে হয়রানি শুরু করেছে। আমি খুব আতঙ্কে দিনাপাত করছি। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর প্রতি আকুল আবেদন নির্যাতনকারী স্বামীর কবল থেকে আমি পরিত্রাণ চাই ও সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর মা আমেনা বেগম বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় যৌতুক ছাড়াও আরও দুইবার তিন লাখ টাকা দিয়েছি। স্বামী সরওয়ারের নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করতে চেয়েছিল আমার মেয়ে। কিন্তু মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর প্রাণের ভয় থাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়াবাড়ি করলে আমাকেও প্রাণে হত্যা করবে বলে বারবার হুমকি দিচ্ছে। আমি খুব অসহায় দিনাপাত করছি। যারাই আমাকে সহযোগিতার চেষ্টা করছে তাদেরকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। দেড় বছরের নাতিকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিনাপাত করছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গৃহবধূ, নির্যাতনে, পেকুয়ায়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন