পেকুয়ায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ ৭ম শ্রেণীর মাদ্রাসার ছাত্রী রিনা আক্তার (১৩)।

নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্রীর উদ্ধার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। গত ১৬ ডিসেম্বর মাদ্রাসা ছাত্রী রিনা আক্তার নিখোঁজ হন। প্রায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি। অপহৃত কোমলমতি মেধাবী ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারসহ আইনী সহায়তার দাবীতে পরিবারের এ সংবাদ সম্মেলন।

এ সময় পেকুয়ার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে দেওয়ার সময় নিখোঁজ ছাত্রী রিনা আক্তারের মা কান্নাজড়িত কন্ঠে মেয়েকে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধারের কাকুতি জানান।

লিখিত বক্তব্যে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্রীর মা হাছিনা বেগম জানান, আমি আমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে চাই। পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজারে কেনাকাটা করতে বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা গ্রামের আবদুল জলিলের পুত্র বখাটে আবদুল মন্নানসহ আরও কয়েকজন সহযোগী আমার মেয়েকে জোরপূর্বক গাড়ীতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। মেয়ে আর বাড়িতে ফিরেনি।

পেকুয়া থানায় গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর থানায় সাধারণ ডায়েরী লিপিবদ্ধ করা হয়। যার নং ৬১৪/২০। মেয়ে নিখোঁজ থাকায় বখাটে আবদুল মন্নানসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করি। নিয়মিত মামলা হিসেবে পুলিশ সেটি রেকর্ড করতে বিব্রতবোধ দেখান। এরপর উৎকন্ঠা অবস্থায় আমার স্বামী চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্মরণাপন্ন হন। গত ১৮ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নালিশি অভিযোগ পৌছানো হয়েছে। বিচারিক আদালত ৩ দিনের মধ্যে ভিকটিম উদ্ধার ও এর অগ্রগতির জন্য ওসি পেকুয়াকে আদেশ দেন।

পেকুয়া থানার এসআই ছিদ্দিকুর রহমান আদালতে সাংঘর্ষিক ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রেরণ করে। যা নিয়ে পুলিশের সহযোগিতা ও মেয়ে উদ্ধার নিয়ে নতুন করে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। পুলিশের প্রতিবেদন ছিল একপেশী। তথ্যের বিভ্রাট ঘটিয়ে প্রকৃতপক্ষে অপহরণকারীকে দায় এড়ানোর সুযোগ তৈরি করে। এর বিরুদ্ধে আমার স্বামী বিচারিক আদালতে নারাজি পৌছান। আদালত নারাজিটি আমলে নিয়েছেন। এমনকি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারিক আদালত দৃষ্টিনন্দন আদেশ দেন। ১০ দিনের মধ্যে মেয়েকে উদ্ধার করতে পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।

এ দিকে বিচারিক আদালতের দুটি আদেশ বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু বিগত ১ মাস সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মেয়েকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি। আমরা মেয়ের অপহরণকারীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য ও মুঠোফোনের কথোপকথনের কিছু নমুনাও পুলিশকে দিয়েছি। থানায় বহুবার গিয়েছি। পুলিশের তৎপরতা নিয়ে আমরা আরো হতাশ হয়েছি। একজন ছোট্ট মেয়ে মাত্র ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক মেয়ে। মেয়েটি কোথায় আছে, এখন কি অবস্থা, আদৌ কি বেঁচে আছে নাকি তাকে সম্ভ্রমহানি করে আসামীরা তাকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে এ নিয়ে আমি মা হিসেবে চরম উৎকন্ঠা ও উদ্বেগের মধ্যে আছি। মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমার পরিবারে কঠিন অবস্থা বিরাজ করছে। আমার স্বামী খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে সন্তানের মায়া মা বাবার চেয়ে আর বোঝার কে আছে।

আমি রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসনযন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলবো মানুষের নিরাপত্তা দেবে রাষ্ট্র। সেখানে একটি সন্তান কঠিন অবস্থায় পড়েছে। তাহলে কি পেতে পারিনা আইনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা। আমি পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছিনা। পুলিশের ভুমিকা রহস্যজনক। আমি চিহ্নিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের আকুল আবেদন করছি। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমি পেতে পারি আমার মেয়েকে। আবদুল মন্নান একজন দুর্দান্ত বখাটে। সে আমার মেয়েকে এর আগেও একাধিকবার অপহরণ চেষ্টা চালায়। তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। মেয়ে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় বহুবার উত্যক্ত করেছে। ওই বখাটে আমার মেয়েকে সর্বনাশ করতে অপহরণ করেছে। আমি আমার মেয়ের উদ্ধার চাই।

১৩ জানুয়ারি (বুধবার) বিকেলে পেকুয়ায় নিখোঁজ ছাত্রী উদ্ধার চেয়ে সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা গ্রামে ফরিদ আলমের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় এ সংবাদ সম্মেলন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রিনা আক্তারের দাদী মনোয়ারা বেগম, চাচা বেলাল উদ্দিন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নিখোঁজ, পেকুয়ায়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন