পেকুয়ায় ৪ ইট ভাটায় নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ

কাঠ পাচার

পেকুয়া প্রতিনিধি:

পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছেই ৪ ইট ভাটা। আর এসব অবৈধ ইট ভাটায় নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ।

জানা যায়, সরকারের পরিবেশ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩ কিলোমিটারের আশেপাশে কোন ধরণের ইট ভাটা তৈরী করে ইট পুড়া নিষেধ। এমন কি কোন ধরনের কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার কারা যাবে না কোন ইট ভাটায়। কিন্তু অবৈধভাবে গড়ে উঠা পেকুয়ার ওই ৪ ইট ভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালার কোন তোয়াক্কা করছে না। এখানে গড়ে উঠা ইট ভাটাগুলোর অবস্থান সরকারি বনাঞ্চলের মাত্র ১কিলোমিটারের মধ্যেই। পাহাড়ের সন্নিকটে এই ৪টি অবৈধ ইট ভাটার অবস্থান। আর এখানে একমাত্র জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালি। অন্যদিকে ইট উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ফসলী জমির উপরিভাগের মাটি। ইট উৎপাদনের জন্য খনিজ কয়লা পুড়ানোর জন্য সরকার বাধ্যতামূলক করে আইন পাশ করলেও এসব ইট ভাটাগুলোতে প্রতিনিয়িত পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। শুধুমাত্র খনিজ কয়লা ওই ৪টি ইট ভাটার সামনে লোক দেখানো মজুদ রাখা হয়েছে। এগুলো না জ্বালিয়ে মাসের পর মাস স্তুপ রাখা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইট পুড়ানোর জন্য খনিজ কয়লার কোন বিকল্প নেই। এর পরও কয়লায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এই ইট ভাটার মালিকদের ইট উৎপাদনে সামান্য লাকড়ি পোড়ানোর নিয়ম রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু মালিকরা কয়লার পরিবর্তে পুরোটাই লাকড়ি জ্বালিয়ে নির্বিঘ্নে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রসাশনের নাকেডগায়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিকট অবৈধভাবে এ সব ইটভাটা গড়ে ওঠলেও তাদের বিরুদ্ধে নেই কোন আইনি ব্যবস্থা। ফলে তারা আরো দ্বিগুন উৎসাহিত হয়ে বেপরোয়া ভাবে বন ও পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি সাধন করে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটার কারণে প্রতিনিয়িত উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর হুমকির মূখে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য।

স্থানীয়রা জানান, বিগত ১০ থেকে ১২বছর পূর্বে পেকুয়া উপজেলার টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিকট ৩টি ইট ভাটা গড়ে ওঠে। এর মধ্যে স্থানীয় ঠিকাদার শাহাব উদ্দিনের মালিকানাধীন এবিএম ব্রিকস, আহমদ নবীর মালিকানাধীন এপিএম ব্রিকস দু‘টির অবস্থান টইটং ইউনিয়নে সংরক্ষিত বনের এক কিলোমিটারের মধ্যেই।

জানা গেছে, পূর্বে গড়ে ওঠা ৩টি ইট ভাটায় সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে। নতুন গড়ে ওঠা ইট ভাটা মালিকরা তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ইট ভাটা করেছে।

অভিযোগ ওঠেছে, ওই ইট ভাটার মালিক তথ্য গোপণ করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের করে সেটির অনুমোদন নিলেও বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকরি ইট পুড়ানো আইন লংঘন করছেন। সম্প্রতি সময়ে অনুমোদন নেওয়া ওই ইট ভাটার অবস্থানও সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যেই। এ ছাড়া ইট উৎপাদনে পুরোটাই কয়লা জ্বালিয়ে ইট উৎপাদনের শর্তারোপ বেধে দেওয়া হলেও এ নিয়ম মোটেও মানা হচ্ছে না। তারাও অন্যগুলির মত কেবলমাত্র লাকড়ি জ্বালিয়ে ইট উৎপাদন করছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইট ভাটাগুলোতে ইট উৎপাদনের জন্য লাকড়ি পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার চিমনি দিয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ইট ভাটায় কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, লাকড়ি পোড়ালে চিমনি দিয়ে এ ভাবে কালো ধোঁয়া বের হয়। অন্যদিকে কয়লা পোড়ানো হলে বের হবে সাদা ধোঁয়া।

দেখা গেছে এসব ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য লাকড়ি মজুদ করা হয়েছে। কিছু খনিজ কয়লা রাখা হয়েছে। এগুলো শুধু লোক দেখানো জালানো হয় না। লাকড়ি দিয়ে ইট উৎপাদন করলে খরচ লাগে কম। তাছাড়া পাহাড় বেষ্টিত ইট ভাটায় কম টাকায় লাকড়ি পাওয়া যায়। এক শ্রেণির অসাধু কাঠচোর সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ ও গাছের ডালপালা কেটে এ সকল ভাটায় বিক্রি করে। এ সুবাধে কাঠচোর সিন্ডিকেট পাহাড় থেকে গাছ কেটে এনে পানির দামে বিক্রি করে তাদের কাছে। পাহাড় অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ লাকড়ির উপর জীবিকা নির্বাহ করে। তারা অনেকে কাধে বহন আবার কিছু ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, জীপযোগে পরিবহন করে ইট ভাটাসহ অন্যত্র পাচার করে থাকে। এদিকে এ কাজ নির্বিগ্নে চালিয়ে গেলেও এদের বিরুদ্ধে নেই কোন ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ ও প্রশাসন নিরব থাকায় দিনদিন তাদের দৌরাত্য বেড়েই চলেছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ ইট ভাটাগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে লোক দেখানো জরিমাণা আদায় করলেও বর্তমানে প্রশাসন রহস্যজনক ভাবে এতে নিরব রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা জানিয়েছেন, বনবিভাগের অসাধু কর্মকতারা ওই অবৈধ ইট ভাটাগুলোর মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোয়ারা নিয়ে প্রতিনিয়ত বনের গাছ দিয়ে নির্বিচারে ইট পুড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। তারা এসব অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরাসরি বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া বনবিট কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম বলেন, খবর নিয়ে অবৈধ ইট-ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিগগিরই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন