প্রথম কোনো রোহিঙ্গা নারীর ভারতে ‘স্নাতক ডিগ্রি’ অর্জন, শোনালেন জীবনের গল্প

fec-image

তাসমিদা জোহার, যিনি ভারতীয় রোহিঙ্গা নারীদের মধ্য থেকে প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ছিল একটা যুদ্ধের অনুভূতি।

ভারতে রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে প্রথম স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাসমিদা জোহর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তাসমিদা জানিয়েছেন এই সাফল্যের পথ পাড়ি দেওয়ার কথা। বলেছেন, রোহিঙ্গা হওয়ায় জীবনের বাঁকে বাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। তবে থেমে যাননি। নিজের প্রচেষ্টায় স্নাতক শেষ করেছেন। এখন কানাডায় গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চান তিনি।

তাসমিদা কাজ করতে চান মানবাধিকারকর্মী হিসেবে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গিয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের কথাও তুলে ধরতে চান ২৬ বছর বয়সী এ তরুণী। ‘আমার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার কথা জানানো। কারণ দিনকে দিন আমরা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছি।”

তাসমিদা জোহরের জন্ম মিয়ানমারে। কিন্তু সেখানে বৌদ্ধ নাম না থাকলে স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না উল্লেখ করে তাসমিদা বলেন, তাই স্কুলে ভর্তির আগে নাম পরিবর্তন করা হয়। আমার বাবা-মা বাধ্য হয়ে আমার নাম পরিবর্তন করেন সে সময়। শুধু তাই নয়, স্কুলে রোহিঙ্গা শিশুদের ওপর আরও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতো।

তাসমিদা বলেন, আমার বাবা আমানুল্লাহ জোহরের ফল ও সবজি রপ্তানি ও বিক্রির ব্যবসা ছিল। প্রায়ই তাকে আটক করত পুলিশ। পরে তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দিত।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ায় তাসমিদার পরিবার ২০০৫ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় কক্সবাজারে। দেশত্যাগের আগে তাসমিদা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতের হরিয়ানায় চলে যায়। সেখানে স্কুলজীবন শুরু করাও ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন বাসে করে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতেন তিনি।

ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা নানা ভীতির কারণে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে চান না। তারা ভাবেন, তাদের মেয়েদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠালে সরকার তুলে নিয়ে যেতে পারে কিংবা তাদের অপহরণ, ধর্ষণ বা বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। মূলত বার্মায় ঘটে যাওয়া এমন ঘটনার জন্যই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকেন।

তাসমিদার মা আমিনা খাতুন চান তার মেয়ে আরও পড়াশোনা করে তাদের সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করুক।

অনগ্রসর ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর-ডুওলিঙ্গো প্রোগ্রাম চালু করে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নির্বাচিত ২৫ জন শরণার্থী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাসমিদা অন্যতম। তিনি বর্তমানে কানাডার উইলফ্রেড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাকস্পেটেন্স লেটারের জন্য অপেক্ষা করছেন।

সূত্র: আল-জাজিরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন