‘বাঙ্গালীদের ভূমিহারা করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামীকালের হরতাল’

Pic-01-06-13-01

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
মন্ত্রী পরিষদের সভায় পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন নীতিগতভাবে খসড়া সংশোধনী প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনসহ ছয়টি বাঙ্গালী সংগঠন। শনিবার দুপুরে রাঙামাটিতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমঅধিকার আন্দোলন রাঙামাটি জেলার সভাপতি পেয়ার আহম্মেদ খাঁন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর শহীদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ ও সদস্য জালাল শিকদার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মে’১৩ইং মন্ত্রীসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন এর খসড়া অনুমোদন হওয়ায় বাঙালীরা ভূমি অধিকার অনিশ্চতায় পড়ে ক্ষোভে আন্দোলনে ফেটে পড়েছে। ফলে বাঙালীদের ভূমি হারা করার সরকারী সিদ্ধান্তে প্রতিবাদে বাঙালীরা এই হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং Allocation of Business, ১৯৯৬ অনুযায়ী এ দেশের ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। সকল মন্ত্রণালয়ের ন্যায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার জন্য প্রযোজ্য। ভূমি কমিশন আইন শরনার্থীদের পুনর্বসান ও শরণার্থী থাকাকালে তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্মরণ রেখেই আইনের ধারা সৃজন করা হয়েছে।

কিন্তু এই কমিশনের মাধ্যমে পুনর্বাসিত শরনার্থীদের ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির বিধানকে সামগ্রীকভাবে উপজাতীয়দের ভূমির বিষয়ে জড়িয়ে চরম জটিলতার সৃষ্টি করেছে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এক কেন্দ্রীক। ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কার্যক্রম ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে।

বিশেষতঃ একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইনের মাধ্যমে দেশের সকল জেলায় যে নিয়মে ভূমি ব্যবস্থাপনা, বিরোধ নিস্পত্তি করা হচ্ছে সেই আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে জানিয়ে বক্তারা বলেন, সরকারকে বুঝা উচিত বৈষম্য নীতিতে কখনো শান্তি আনতে পারে না। শরনার্থীর বিষয়ে বিভিন্ন মতবিরোধ রয়েছে।

যেসব উপজাতি ভারতে গিয়াছে তাদের ভারতীয় আত্মীয় স্বজনদেরকে যুক্ত করে কয়েকগুণ বৃদ্ধি শরনার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসিয়াছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। ভারতে গমন উপজাতীয়দের জায়গা জমিনের খতিয়ান ভূমি অফিস বা সার্কেল চীফ কার্যালয়ে অবশ্যই রক্ষিত আছে।

অসংবিধানিক ষড়যন্ত্রমূলক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত সংশোধনীয় আইন বাতিল করে এবং জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইন আকারে পাশ করার লক্ষ্যে উপস্থাপন না করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় পার্বত্যবাসী অবরোধ, লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এর ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকার দায়ী থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন বক্তারা।

এদিকে রোববারের হরতালে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ, সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলন, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদসহ বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।
গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, পার্বত্যবাসির অধিকার আদায়ে যুগৎপদ আন্দোলনে সংগঠনগুলো সবসময় একে অপরের পাশে দাড়িয়ে অধিকার বঞ্চিত পার্বত্যবাসির অধিকার আদায়ে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের সমর্থন অক্ষুন্ন রাখবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন