বান্দরবানে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব

fec-image

বান্দরবানে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার মহোৎসবে মেতেছে একটি চক্র। মূলত জমির ভরাট কাজে ব্যবহার করতেই এই চক্রটি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলছে। আবার কোন কোন জায়গায় জমি ভরাট কাজে মাটির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সরকারি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে পাহাড়। নানান অজুহাতে প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে পরিদর্শ করে দেখা যায়, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কে রাম জাদির সামনে বিশাল নিচু এলাকাটি ৪ থেকে ৫টি ট্রাক যোগে বহন করে পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে ভরাট করছে কালাঘাটা বড়ুয়ার টেকের বাসিন্দা টিটু বড়ুয়া। রাম জাদির পশ্চিম দিকে গিয়ে দেখা যায় বড় একটি স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ৪ থেকে ৫টি ড্রাম ট্রাক যোগে সেই সব মাটি বহন করে রাম জাদির সামনের জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ রাম জাদির সামনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানে ক্যশৈহ্লার ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। সেই জায়গা ভরাট করতে মাটির প্রয়োজনে গত দুই মাস আগে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময় রাম জাদির পাশে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে “বান্দরবান রোয়াংছড়ি সড়ক থেকে তংপ্রু পাড়া পর্যন্ত এইচ বিবি করন প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ।

এই কাজটি পায় পাবর্ত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার ছেলে কে কে মার্মার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কন্সট্রাশন। তবে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে কাজটি তদারকি করছেন তানিম হাসান নামে এক ঠিকাদার। স্থানীয়রা আরো জানান, তংপ্রু যাওয়ার জন্য সুন্দর একটি রাস্তা রয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজের নিচু জমি ভরাট করার জন্য মাটি যোগান দিতে তংপ্রু পাড়ার রাস্তা নির্মাণের নামে সুকৌশলে পাহাড় কাটছে।

তামিম হাসান নামে এই ঠিকাদার জানান, গ্লোবাল কন্সট্রাশন নামে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার ছেলে। তিনি এই কাজটি তাহার কাজ থেকে ক্রয় করেছেন।

তিনি আরো জানান, রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনে পাহাড় কাটতে হচ্ছে। পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী টিটু বড়ুয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টিটু বড়ুয়া এই মাটি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বা বিক্রি করছে সেটা তার দেখার বিষয় নয় বলে তিনি জানান।

এদিকে রাম জাদির সামনের জমিতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে অর্থায়নে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনের তলা ভরাট করার জন্য একই স্থান থেকে পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের ঠিকাদার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. মুছা প্রকাশ মুছা কোম্পানী জানান, জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্কুল ও কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে। ভবনের তলা ভরাট করতে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী টিটু বড়ুয়ার কাছ থেকে প্রতি গাড়ি ৮০০ টাকায় পাহাড়ের মাটি ক্রয় করতে হচ্ছে। তবে নির্মাণাধীন ভবনের তলা ভরাট কাজে বালির পরির্বতে কেন পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তোর দিতে পারেনি তিনি।

এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী টিটু বড়ুয়া জানান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. মুছা প্রকাশ মুছা কোম্পানী নির্মাণাধীন স্কুল ও কলেজের ভবনের তলা ভরাট করার জন্য পাহাড় কাটছে। তিনি ওই ঠিকাদারকে স্কেভেটর ভাড়া দিয়েছেন।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরুদ্দীন জানান, পাহাড় কাটার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন