বান্দরবানে জনবসতি ছাড়াই পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ

fec-image

প্রবাদ রয়েছে- “জোড় যার মল্লুক তার, ক্ষমতা যার প্রভাব তার” এই প্রবাদের সাথে মিলে যাচ্ছে উন্নয়নের নামে ব্যক্তির স্বার্থে রাস্তা নির্মাণে পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে । বান্দরবান সদর উপজেলায় জনবসতিশূন্য এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখার বিরুদ্ধে। কানা পাড়া থেকে লাঙ্গী দুই পাড়ায় কোন জনবসতি ছাড়াই সংযোগ সড়ক স্থাপনের দোহাই দিয়ে ব্যক্তির স্বার্থে চলছে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কানা পাড়া থেকে লাঙ্গী পাড়া পর্যন্ত তৈরি করা হবে ইট সোলিং সড়কের কাজ। কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থেই জনবসতিশূন্য এলাকায় রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের নামে কয়েক ফুট উচু পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে সড়ক। বনাঞ্চলে গাছ ও পাহাড় কাটা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ভারী যন্ত্র। তবে সড়কের জন্য এখন অর্ধেকের মতো পাহাড় কাটা শেষ। তাছাড়া এই সড়ক নির্মাণ কাজে সিয়াম এন্টারপ্রাইজ নামে প্রকল্প পেলেও পরে ১০ শতাংশ লেস দিয়ে কাজী মহতুল হোসাইন যত্ন নামে এক আইনজীবী কিনে নিয়েছিলেন। প্রকল্পটি দেয়া সিয়াম এন্টারপ্রাইজ নামে থাকলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন আইনজীবী কাজী মহতুল হোসাইন যত্ন। এতে কোন অনুমোদন না নিয়ে প্রশাসনের আইনি তোয়াক্কা না করে পরিবেশ ধ্বংস করে যাচ্ছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ওই সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও আশেপাশে এলাকাটিতে নেই কোনো জনবসতি ।

স্থানীয়রা জানান, কানা পাড়া থেকে লাঙ্গি পাড়া পর্যন্ত নির্মিত সড়ক কোন কাজে আসবে না। তাছাড়া ওই সড়কের কোন গ্রাম কিংবা বসতঘর নেই। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এই সড়ক করা হয়েছে। আশেপাশে প্রভাবশালীদের বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। এই রাস্তাটির জন্য পাড়াবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, কানাপাড়া-লাঙ্গ্যে পাড়া রাস্তা নির্মাণে পাহাড় কেটে শুরু হয়ে প্রায় ৬০০ মিটার পর্যন্ত করা হবে। স্কিমটির প্রাক্কলন মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। চুক্তি মূল্য ৪৫ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। কাজটি দেয়া হয়েছে সিয়াম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। যার স্বত্ত্বাধিকারী আবুল কালাম সেন্টু। রাস্তাটি কানাপাড়া সড়ক দিয়ে সিডিউলে এইচবিবি, এল ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, ড্রেন ধরা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কানাপাড়া সড়কঘেঁষে পাহাড় কেটে কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কানাপাড়া থেকে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত ভারী স্কেভেটর মাধ্যমে পাহাড় কাটা হচ্ছে। আশেপাশে যেগুলো সৃজিত নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে ভরা বনায়ন ছিল সেটি কেটে ধ্বংস করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রবেশের মুখে একটি গাছে টাঙানো সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে ক্রয় সূত্রে এ জায়গার মালিক রাশেদ, মো. আরিফ হাসনাইন, হাবিব উল্লাহ খান ও আশিকুর রহমান। তারা স্থানীয় না হয়ে ভূমির দালালদের মাধ্যমে জায়গাগুলোর মালিক দেখাচ্ছেন তারা। তবে তাদের নাম্বার না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবুল কালাম সেন্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজটি আমি করছি না। আমার লাইসেন্সের নামে কাজ দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করছে আইনজীবী কাজী মহতুল হোসাইন যত্ন। আমাদের থেকে কাজ কিনে নিয়েছে।

পাহাড় কাটা বিষয়ে কাজী মহতুল হোসাইন যত্ন বলেন, উন্নয়ন করতে হলে পাহাড় কাটতে হবে। আর আমি পাহাড় কেটে দেওয়ার জন্য কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। এ ব্যাপারে যা বলা জেলা পরিষদের সাথে কথা বলেন।

এব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ অধীনে কানা পাড়া দিকে পাহাড়া কাটা হচ্ছে সড়ক নির্মাণের জন্য। আমরা খবর পেয়ে পরিদর্শন করেছি। কত ঘনফুট কেটেছে সেটি পরিমাপ করা হয়েছে। যে পাহাড় কেটেছে তার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল রহমান জানিয়েছেন, কানা পাড়া থেকে লাঙ্গি পাড়া পর্যন্ত সড়ক তৈরি করা হবে । তবে সেই কাজটি একবারে সম্ভব নয়। এখন শুধু পাহাড় কাটার কাজ শুরু হবে এরপরে বর্ষা মৌসুম গেলে ইট সোলিং কাজ শুরু হবে। পাহাড়ে কেটে ঝিড়ি থেকে যতটুকু রাস্তা করা যায় ততটুকু কাজ করা হবে। তবে কতটুকু নেওয়া হবে সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন