বান্দরবানে ৮ নিমার্ণ শ্রমিককে অপহরণ করেছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা

fec-image

বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার বগালেক থেকে ৮ নির্মাণ শ্রমিককে অপহরণ করেছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।

শুক্রবার ভোরে কেএনএফ’র সশস্ত্র শাখা ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ওই শ্রমিকদের তুলে নিয়ে যায় বলে জানা যায়। তবে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই দফায় ছয় জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি দু’জনকে জিম্মি করে রেখেছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী টহল তৎপরতাও বাড়িয়েছে। অবশিষ্ট ২ জন মো. ইদ্রিস ও আউয়াল বর্তমানে কেএন‌এফ এর হেফাজতে রয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়। তবে তাদের পূর্নাঙ্গ ঠিকানা এখন জানা যায়নি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বগালেক এলাকায় হারমন পাড়ায় দুর্গম পাহাড়ে উন্নয়নমূলক কাজ করছিলেন ওই আট শ্রমিক। কেএনএফ’র প্রায় ১৬ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সেখানে গিয়ে ওই শ্রমিকদের জিম্মি করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর প্রথম দফায় চারজন এবং পরবর্তীতে দুজন শ্রমিককে তারা ছেড়ে দিয়েছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাকি দুজন শ্রমিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জঙ্গীদের সাথে নেটওয়ার্ক ভেঙে যাওয়ার পর অর্থের সংস্থানে গত দুই মাস ধরে রুমা-বগালেক সড়কে এবং থানচি-লিক্রী সড়কে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক সড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও শ্রমিকসহ প্রায় ১০/১২ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। পরে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি পায় অপহৃতরা। গত ১১ মার্চ বান্দরবানের থানচিতে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চীন ন্যাশনাল ফোর্স (কেএনএফ) এর গুলিতে গাড়ী চালকসহ ৪জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর থেকে সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ও পাথর ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১৬ জন নিখোঁজ ছিল।

রবিবার (১২ মার্চ) সকালে নিখোঁজ ষোল জনের মধ্যে ব্যবসায়ী বাবুল ফরায়েজীসহ ১২ জনকে ছেড়ে দেয় কেএনএফ সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার,ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা দুটি টিএক্স ট্রাক যোগে লিক্রি সড়ক থেকে থানচি সদরের উদ্দেশ্যে আসার পথে বিশ কিলোমিটার নামক স্থানে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এতে ট্রাক চালক জালাল উদ্দীন ও রুবেল শ্রমিক ফোরকান ও ইব্রাহীম গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আহত চারজন আহত অবস্থায় পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হলেও গাড়িতে থাকা ব্যবসায়ী বাবুল ফরায়রজীসহ ১২ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা।

এদিকে একই সময় দুটি মোটর সাইকেলযোগে ৪জন ব্যবসায়ী থানচি সদরে আসার পথে ২২ কিলোমিটার নামক স্থান থেকে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ১৪ মার্চ মঙ্গলবার রাতে থানচি-লিক্রী সড়কের চৌদ্দ কিলোমিটার নামক এলাকায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন, ঠিকাদার জিয়াউল হক জিয়া ও তার বন্ধু জিগর, ঠিকাদার মনির হোসেন ও তার মিস্ত্রি আব্দুল মান্নান এবং পাথর ব্যবসায়ী কাজী নুরুল আনোয়ার। মুক্তিপণ দিয়েই তারা মুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনার গত পর ১৩ এপ্রিল দুপুর ১২টায় রুমা উপজেলার বাজার পাড়া আর্মি ক‍্যাম্পের আওতাধীন বরশীপাড়া ব্রীকফিল্ড হতে ২ জন পাহারাদার যথাক্রমে কক্সবাজারের বছির আহাম্মেদ (৪৫) ও রংপুরের আবু হানিফকে (২৫) কেএনএফ পরিচয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ইটভাটার মালিক জনাব সুজন জানান, ইতিপূর্বে কেএনএফ তাদের ভাটা হতে চাঁদা দাবী করে আসছিল, চাঁদা না দেয়ার কারনে এহেন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। এদিকে কেএনএফের অপহরণের ভয়ে বান্দরবানের শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহরণ, কেএনএফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন