বিদেশি টাইটেল ‘ব্যারিস্টার’ ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়ে আইনি নোটিশ

fec-image

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিদেশি রাষ্ট্রের আইন পেশার টাইটেল হিসেবে ‘ব্যারিস্টার’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (১৭ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ প্রেরণ করেন।

আইনি নোটিশে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এর আগে ১৯৪৭ সালে আমরা প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছি। বাংলাদেশ এখন আর কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের উপনিবেশ নয়, বরং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী বাংলাদেশে যারা আইনজীবী তাদের অ্যাডভোকেট নামে অভিহিত করা হবে। বাংলাদেশে আইনজীবীদের একমাত্র পেশাগত উপাধি হলো অ্যাডভোকেট।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের আইনজীবীদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয় জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, ইংল্যান্ডে যারা আদালতে আইন পেশার নিয়োজিত তাদের ‘ব্যারিস্টার’, আমেরিকায় ‘অ্যাটর্নি ইন ল’, চীনে লুশি এবং জাপানে আইনজীবীদের বেঙ্গোশি বলা হয়। মূলত একেক দেশে আইনজীবীদের তাদের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন টাইটেলে ডাকা হয়। ব্যাপারটা হলো, বাংলাদেশে আমরা যাকে পানি বলি, ভারতের কলকাতায় সেটাকে জল বলা হয়, জাপানে পানিকে মিজু এবং আমেরিকায় সেটাকে ওয়াটার বলা হয়।’

আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর একেক দেশের আইন একেক রকম। যেমন বাংলাদেশের আইন ইংল্যান্ডের আইন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, চীন, রাশিয়াসহ সব দেশের আইন একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এজন্য প্রত্যেকটি দেশে তাদের আইনের ছাত্রকে সেই দেশের আইনের ওপর পড়াশোনা করতে হয়। ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা যেমন সারা বিশ্বে একই রকম, আইনের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়।’

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের আইনজীবীদের একমাত্র বৈধ পেশাগত টাইটেল হলো অ্যাডভোকেট উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এই অ্যাডভোকেট শব্দ ছাড়া বিদেশি কোনও রাষ্ট্রের আইন পেশার টাইটেল ব্যবহার করা বৈধ নয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিদেশি ও সাবেক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের আইনজীবীদের টাইটেল ব্যারিস্টার ব্যাবহার করা হচ্ছে; যা পুরোপুরি অবৈধ। উক্ত ব্যারিস্টার শব্দ ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের আইন পেশার বৈধ টাইটেল অ্যাডভোকেট শব্দটি অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এর ফলে বিচার প্রার্থী ক্লায়েন্টরা ব্যারিস্টার ও অ্যাডভোকেট শব্দের মধ্যে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন এবং অ্যাডভোকেটরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

বাংলাদেশের যেকোনও নাগরিক বিদেশি রাষ্ট্রে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করতে পারেন এবং সেই দেশের আইনজীবী তথা ‘ব্যারিস্টার’ হতে পারেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য যদি হয় ইংল্যান্ডের আইন পেশার টাইটেল ‘ব্যারিস্টার’ ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ক্লায়েন্টদের প্রভাবিত করা; তাহলে বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিক বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

উক্ত আইনি নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবৈধভাবে ও অনৈতিকভাবে ব্যবহৃত বিদেশি রাষ্ট্রের আইন পেশার টাইটেল ‘ব্যারিস্টার’ শব্দটি নিষিদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ‘অ্যাডভোকেট’ হতে গেলে বাংলাদেশের কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করারও দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রিট দায়ের করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন