বৈসাবী’র বর্ণাঢ্য র‌্যালী আর জেলকেলিতে মেতে উঠেছে পার্বত্যবাসী রং লেগেছে সবুজ পাহাড়ে

boisabi pic guimara (2)

স্টাফ রিপোর্টার ॥

পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব। পহেলা বৈশাখকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কাব্য-কবিতা। হালখাতা, পূণ্যাহ ও গ্রাম্য মেলা পহেলা বৈশাখের একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করে। ১ বৈশাখ বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব হলেও পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীরা এ উৎসব’কে বৈসাবি নামে ডাকে। চৈত্রের শেষদিন বর্ষ বিদায় আর বৈশাখের প্রথম দিনটি ভিন্ন আমেজে উৎসবটি পালন করে তারা। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি গুলোর প্রধান সামাজিক ও জাতীয় উৎসব বৈসাবি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পাহাড়ে সপ্তাহব্যাপী শুরু হয়েছে নানা কর্মসুচি। এখানকার প্রধান ৩টি জাতি গোষ্ঠি চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের নিজস্ব ভাষায় ১ বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তিকে ত্রিপুরা ভাষায় “বৈসু” মারমা ভাষায় সাংগ্রাইং এবং চাকমা ভাষায় “বিজু” নামে অভিহিত করা হয়। আর এ তিন নামের আদ্যাক্ষর দিয়েই হলো (বৈসু-সাংগ্রাইং-বিজু) বৈসাবি উৎসব। এবছর পাহাড়ের মানুষ যেন সাচ্ছন্দে এ উৎসব পালন করতে পারে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি’র বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে বিকালে জেলার গুইমারা রামসু বাজার এলাকা থেকে মারমা উন্নয়ন সংসদ গুইমারা থানা শাখার উদ্যোগে বর্ণাঢ্য একটি র‌্যালী বের হয়। র‌্যালী পূর্ব মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা উদ্বোধন করেন ২৪ আর্টিলারী ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রাব্বী, রিজিয়নের বিএম মেজর হাসান মাসুদ, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী, গুইমারা ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। সম্মিলিত র‌্যালীটি গুইমারা বাজার থেকে জালিয়াপাড়া বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।

এতে পাহাড়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা বয়সের নারী-পুরুষ অংশ গ্রহন করেন। র‌্যালীটি গুইমারা থানার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির আহবায়ক অংগ্য মারমা সভাপতিত্বে বৈসাবি সর্ম্পকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মারমা ঐক্য পরিষদ বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে ৪দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে বসেছে মেলা। মিষ্টি, মিঠাই, নাগরদোলা চড়ে ব্যাপক আনন্দের ভাসছে পার্বত্যবাসী। ঘরে ঘরে মেহমান ও মেহমানদের আপ্যায়নের জন্য নানা প্রকার মিষ্টি, পাচন (একধরনের বিশেষ সব্জি), গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ, বাংকি ইত্যাদির মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় উপজাতীয়রা তরুন-তরুনীদের নতুন পোশাক পরে মেলায় আসতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে বৈসাবি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পানি খেলা, আ-লা-রে, ধ, মাগ্রং, রশি টানা সহ বিভিন্ন উপজাতীয় খেলা। আগামী ১৬এপ্রিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে শেষ হবে বৈসাবি’র আমেজ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন