ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ফের উত্তপ্ত খাগড়াছড়ি

11065024_795469443880678_1232190830_o copy
এম. সাইফুর রহমান, খাগড়াছড়ি:

আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। পাহাড়ের মানুষের প্রাণের উৎসব বৈসাবীকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নানান কায়দায় শান্তি প্রিয় পাহাড়ী-বাঙালীর মাঝে সাম্প্রদায়ীক সম্পৃতি নষ্টের চেষ্টায় মত্ত থাকে। আর এ ষড়যন্ত্রে একাধিকবার সফল হয়েছে স্বার্থান্নেসী মহলটি।

এবার ঠিক বৈসাবীকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা বিগত দিনের মত নীল নকসা তৈরি করছে এমনটাই অভিযোগ করছেন সচেতন মহল। যদিও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সহ আইন-শৃঙ্খলা মিটিং-এ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসীদের দমনে এবং তাদের সকল নাসকতা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের অনিবন্ধিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের অব্যাহত চাঁদাবাজি বন্ধ, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও নিরীহ জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার দাবীতে বিক্ষোভ করে আসছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বামা গোমতি এলাকায় পাহাড়ের চুক্তিবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সন্ত্রাসীরা গুলি করে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো: আবুল হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে সোমবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ

রোববার (২৯ মার্চ) সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নীন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ হরতাল আহবান করে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. আলহাজ্জ আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া, পার্বত্য বাঙালী ছাত্রপরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শেখ আহমেদ রাজু।

বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, উপজাতি সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে না পারার অপরাধে আর কতজনকে প্রাণ হারাতে হবে? আর কতো আবুল হোসেনের লাশ দেখবো আমরা। আর কত তাজা প্রাণ কেড়ে নিবে সন্ত্রাসীরা? তিনি এ মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা দাবী করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবী করেন।

এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আহবান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এখন থেকে প্রতিটি বাঙালী হত্যার জন্য উপজাতীয় নেতাদেরকেই অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তারা মন্ত্রী এমপি হবেন, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ যাবতীয় নেতৃত্বে থাকবেন আর এভাবে বাঙালীদের হত্যা করবেন, এভাবে চলতে দেওয়া যায়না। প্রতিটি হত্যার জবাব তাদেরকে অবশ্যই দিতে হবে।’

এর আগে শনিবার সকালে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সন্ত্রাসীদের গ্রপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ। অন্যদিকে টানা অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষণাও করে সংগঠনটি। আল্টিমেটামের ঠিক ৬ ঘণ্টা পর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মারা যাওয়ার পর রবিবর হরতালের ডাক দেয় সংগঠনটি।

এদিকে ইউপিডিএফ এর অব্যাহত চাঁদাবাজি বন্ধ এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ও ব্যবসায়ী মো: আবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ-মিছিল করেছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ। রোববার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে তবলছড়ি চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগ এর সভাপতি এম.এম জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে পৗর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর মো: আলাউদ্দিন লিটন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো: এমরান হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মোহাম্মদ আলী, ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা মটরযান শ্রমিকলীগের সভাপতি মো: হাফেজ পাটোয়ারী বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, উপজাতীয় সন্ত্রাসীদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বামা গোমতি এলাকায় সন্ত্রাসীরা মো: আবুল হোসেনকে গুলি করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে তিনদিন পর শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন