‘ভারতকে কেউ হারালে, সেটা অস্ট্রেলিয়াই পারবে’

fec-image

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ -এর সেরা দুটি দল হিসেবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

দুটি দলই গোটা টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ক্রিকেটীয় নৈপুণ্য ও মানসিক শক্তির প্রদর্শনী দেখিয়েছে।

তাই আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ম্যাচ নিয়ে আশাবাদী ক্রিকেট অনুরাগীদের অনেকেই।

অনেকে মনে করছেন, এটাই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভালো ফাইনাল লাইনআপ।

কারণ ভারতের এই দলটাকে যদি কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে তবে সেটা অস্ট্রেলিয়াই হতে চলেছে।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন এমনটাই মনে করছেন।

তার মতে দারুণ একটা ফাইনাল অপেক্ষা করছে ক্রিকেট ভক্তদের জন্য।

ভারতে চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপটি ওয়ানডে ফরম্যাটের ১৩তম বিশ্ব আসর, এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আটবার ফাইনালে উঠেছে, পাঁচবার শিরোপা জিতেছে।

ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মতো সফল ও তুখোড় দল আর দ্বিতীয়টি নেই।

ভারত এবার একটা নিখুঁত দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে।

ভারতের সাবেক কোচ জন রাইট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ভারতের শীর্ষ ব্যাটার সবার গড় ৫০ -এর ওপরে, বোলাররা গড়ে ১৭টি করে উইকেট পেয়েছেন এই বিশ্বকাপে। দলটার দুর্বলতা আসলে কোথায়?’

রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব ও রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ের অধীনে থাকা এই ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোনো ফাঁকই খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত।

বিশ্বকাপে মাঠে নামার পর থেকে ফাইনাল পর্যন্ত খেলা দশটি ম্যাচের দশটিতেই নিরাপদ একটা ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছে ভারত।

তবে হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচের শুরুতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়া করার সময়ে এবং সেমিফাইনালে আবারো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হয়েছে যে ভারত হারতেও পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারেনি।

ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মা উড়ন্ত শুরু এনে দেন, কোহলি ধরে খেলেন, শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল নিজেদের কাজটা যথাযথভাবে করেন।

আর বোলারদের মধ্যে জসপ্রিত বুমরাহ উইকেট না পেলে সিরাজ পাচ্ছেন, সিরাজ-বুমরাহ দুজনই উইকেট পেতে ব্যর্থ হলে শামি পাচ্ছেন।

নতুবা রাভিন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদভ মাঠে ব্যাটারদের স্পিনে কাবু করছেন। অর্থাৎ একটা দলে কোনো ক্রিকেটারই অফ ফর্মে নেই।

তবে এতো কিছুর মধ্যেও অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার জশ হ্যাজলউড বলেছেন, ভারতের কিছু ঘাটতি অস্ট্রেলিয়ার জানা আছে।

হ্যাজলউডের কথা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়, চলতি বিশ্বকাপেই লিগ পর্বের ম্যাচে ২ রানে ভারতের ৩ উইকেট ফেলে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলাররা।

লোকেশ রাহুলের ৯৭ ও ভিরাট কোহলির ৮৫ রানের ইনিংস ভারতকে সেদিন ম্যাচ জিতিয়েছিল।

হ্যাজলউড বলেছেন, ‘যা যা দরকার সবই আছে ভারতের। ভালো পেস বোলার, ভালো স্পিনার, ভালো ব্যাটার। সব জায়গায়ই ভারতের টিক চিহ্ন দেয়া রয়েছে’।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে ফাইনালের উইকেট নিয়ে রহস্যের কথা বলা হয়েছে, যে ঠিক কি ধরনের উইকেট হবে তারা নিশ্চিত না।

যেমন অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ফাস্ট বোলাররা শুরুতে সুবিধা পেয়েছেন পরে স্পিনাররা।

হ্যাজলউডের মতে এটা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত নকআউট ম্যাচগুলোতে প্রথম আঘাতটা করতে পারা, প্রতিপক্ষকে একটু ধাক্কা দিতে পারা যেটা তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪ রানের মাথায় চার উইকেট হারিয়ে ম্যাচের শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল।

এই একই পরিকল্পনা অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের জন্যও করবে বলছেন হ্যাজলউড, ‘যদি আমরা আগে বোলিং করি তাহলে চেষ্টা থাকবে শুরুতেই আঘাত করার।’

এরপর টানা সাত ম্যাচ জিতে নক আউট পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে প্যাট কামিন্সের দল।

এবারের অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল, অ্যাডাম জাম্পা ছাড়া কোনো স্পেশালিস্ট স্পিনার ছিল না।

তবে দ্বিতীয় স্পিনারের কাজটা ভালোভাবেই করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ট্রাভিস হেডও দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের গতিপথ অস্ট্রেলিয়ার দিকে নিয়ে গেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের সদস্যরা ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার ব্রিলিয়ান্ট ক্রিকেটের কাছে হেরেছি। চাপের মুখে নয়’।

চাপের মুখে হারের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার নামই হয়ে গেছে ‘চোকার্স’।

এবারের বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার দলটা নিয়ে তেমন বড় কোনো প্রত্যাশা বিশ্লেষকরা করেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে উঠেছে এবং পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে।

ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক বলেছেন, ‘এবার পাওয়ারপ্লেতে আমরা তেমন ভালো বল করতে পারিনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করেছি’।

১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১৪ রানের টার্গে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানে ম্যাচ টাই করে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

২০০৭ ও ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনাল বাধা টপকাতে পারেনি।

স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রব ওয়ালটারকে প্রশ্ন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা চাপে ভেঙ্গে পড়েছে কি না।

তিনি বলেছেন, ‘চাপে ভাঙ্গা বলতে কী বোঝায় সেটা জানতে চাই আমি। আসলে আমরা জয়ের মতো পজিশনেই ছিলাম না। আমরা শুরু থেকেই পিছিয়ে ছিলাম এরপর সম্মানজনক একটা স্কোর দাঁড় করাই’।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোচের মতে, দুই ইনিংসেই প্রথম দশ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেছে।

ব্যাটিংয়ে ৩০-৪০ রান কম হয়েছে, বলেছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অস্ট্রেলিয়া, ভারত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন