ভারী গোলার শব্দে কাঁপছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত, বেড়েছে চোরের বিচরণ

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু-থাইংখালি-পালংখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষে ছুঁটে আসা মর্টারশেল ও ভারী অস্ত্রের বর্ষণে কাঁপছে এ দেশের ২০ কিলোমিটার সীমান্ত। উত্তপ্ত সীমান্ত পরিস্থিতে বাংলাদেশের ১৩ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ওই সব এলাকায় এখন চোরে উপদ্রব বেড়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তিনি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘমধুম ও তুমব্রু যে সব গ্রাম রয়েছে তাদের সকলকে নিরাপদে সরে যেতে বলেছেন দাবী করে তিনি বলেন, যাদের কোথাও আশ্রয়ের সুযোগ নেই, তাদের জন্যে ২টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হযেছে। তাদের খাবারসহ সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় বিজিবির সূত্রগুলো জানায়, সংঘাতে জের ধরে জান্তা বাহিনীর বিজিপি ২৬৪ সদস্য জীবন বাচঁতে এদেশে ঢুকে পড়েছে গত ৩ দিন ধরে। তাদেরকে তুমব্রু, ঘুমধুম, পালংখালীসহ সীমান্ত বিওপিগুলোতে নিরাপদে রাখা হয়।

বান্দরবান জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গ্রামের লোকজনকে নিরাপদস্থল উত্তর ঘুমধুমের বড়বিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অস্থায়ী করে সেখানে চলে যেতে বলা হয়।

ডিসি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের নির্দেশে স্থানীয় লোকজকে সরে যেতে বলা হয়েছে। ঘুমধুম সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১নং উত্তর ঘুমধুম স. প্রা. বি. কে জনগণের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যারা অর্থাভাবে আশ্রয় শিবিরে যেতে পারছেন না তাঁদের গাড়ি বাড়ার জন্য চেয়ারম্যান টাকা দিচ্ছেন। বলে নিশ্চিত করেছেন দুই নাম্বার ওয়ার্ডের আনসার সদস্য জনাব আমির বশর।

এদিকে মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলার উত্তরে তুমব্রু রাইট বিজিপি ক্যম্প ও তুমব্রু লেফট (ঢেকুবনিয়া) ০২ নং বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদর বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ার জন্য গত ০৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত হতে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করলে মায়ানমার সেনা /বিজিপি পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। তুমব্রু রাইট বিজিপি ক্যম্প টানা ১৪ ঘন্টাব্যাপী প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহী গ্রুপ দখলে নিয়েছেন ।

পরর্বতীতে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত ১২টা থেকে তুমব্রু লেফট ক্যাম্প (ঢেকুবনিয়া) ০২ নং বিজিপির ব্যটলিয়ন সদর দখলে নেওয়ার জন্য বিদ্রোহী গ্রুপ AA আক্রমণ শুরু করলে মায়ানমার সেনা ও বিজিপি পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। দফাই দফাই উভয়ের মাঝে আক্রমণের ফলে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি সেনাদের একটি মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের জলপাইতলী গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়ার রান্না ঘরে পড়ে মটর শেলের আঘাতে বাদশা মিয়ার স্রী হোছনে আরা ও একজন রোহিঙ্গা শ্রমকিসহ দুজন নিহত হয়।

বিদ্রোহী গ্রুপ ও সেনা বিজিপির মাঝে সংঘর্ষে ঝুকিপূর্ণ হিসাবে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, জলপাইতলী , তুমব্রু পশ্চিমকুল, ক্যাম্প পাড়া, বাজার পাড়া, কোনারপাড়া, মধ্যম পাড়া, ঘোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, ভাজাবনিয়া পাড়া, উলোবনিয়া পাড়া, চাকমা পাড়া ও বাশঁ বাগান পাড়ার লোকজনকে বান্দরবান জেলার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশ ক্রমে ঘুমধুম ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান জনাব একেএম জাহাঙ্গীর আজিজের নেতৃত্বে সরিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের উত্তর ঘুমধুম বড়বিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়ার কার্যক্রম শুরু করছেন বলে জানা যায়।

বিদ্রোহী গ্রুপ ও মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির মাঝে সংঘর্ষের সূত্র ধরে মিয়ানমারে বসবাসরত কিছু রোহিঙ্গা নাফনদী পাড়ি দিয়ে ও স্থল পথে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশের সুযোগ নেওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায় ।

এদিকে মিয়ানমার সেনা বিজিপির ক্যাম্প ও ব্যাটলিয়ান দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গ্রুপ ও সেনা বিজিপির শত শত গুলি ও কিছু শক্তিশালী মর্টার শেল বাংলাদেশর বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় আঘাত করেন জানা যায়। বান্দরবান জেলা প্রশাসন উপরোক্ত সীমান্তবর্তী গ্রাম ও পাড়া গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করে এবং জনগণের জানমাল রক্ষার্থে লোকজনকে সাময়িক সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ রাত ৮টা নাগাদ ঘুমধুম ও তুমব্রুসহ সীমান্তের ১৩ গ্রামের বাড়ি-ঘরে নেই কোন মানুষ। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া গ্রাম গুলোতে শুন-শান নীরবতা। দোকান পাট বন্ধ ২ দিন। মাঝে মধ্যে বাড়ির পাহারা জন্যে পুরুষ থাকলেও তারা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না।

এমতাবস্থায় পাশের অনেক রোহিঙ্গাকে সে সব এলাকাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। রাতে চোর-ডাকাতের বিচরণ বেড়ে গেছে গেছে মন্তব্য অনেকের।

দু’এক গ্রামবাসীর মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা জানা গেছে, তারা ভয় পাচ্ছে চোর-ডাকাতের। কখন কারা এখানে হানা দেবে বলে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, তিনি বিষয়টি বিবেচনায় এনে গত ২ দিন ধরে সীমান্তের গ্রাম সমূহে পুলিশী টহল বৃদ্ধি করেছেন। রাতে এ অভিযান আরো সতর্কতার সাথে করা হচ্ছে। যেন বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাওয়া লোকজনের যান-মাল নিরাপদ থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বেড়েছে চোরের বিচরণ, ভারী গোলা, শনাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন