মাটিরাঙ্গায় কলাগাছের তৈরী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন

fec-image

তরুণদের রক্তস্নান এবং বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিদীপ্ততায় বাঙালী জাতি অর্জন করেছে মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। মাতৃভাষা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরী হয়েছে শহীদ মিনার। কিন্তু খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী আলুটিলা বটবৃক্ষ ঘেঁষে পাশাপাশি অবস্থিত আলুটিলা বটতলী হাই স্কুল ও আলুটিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে নেই শহীদ মিনার। ফলে ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছরে পা দিয়েও কলা গাছ দিয়ে তৈরী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিববেদন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলা গাছ দিয়ে নিজেদের তৈরী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দুই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জনগন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হলেও ৬/৭ বছর আগে শতবর্ষী বটগাছের ঢাল ভেঙে পড়লে বটগাছের নীচে তৈরী শহীদ মিনারটি ভেঙে যায়। এরপর দীর্ঘ বছর পার হলেও শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি।

শহীদ মিনার নেই তাতে কী? তাই বলে কী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে না! তাই গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের আবেগ আর ভালোবাসায় কলা গাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা, এমনটাই জানিয়েছেন আলুটিলা বটতলী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এরশাদ আলী।

আলুটিলা বটতলী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এরশাদ আলী বলেন, আমি এ স্কুলে যোগদান করেছি তিন বছর আগে। এখানে দুটি স্কুল পাশাপাশি হলেও কোন শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে। এরপর কলা গাছে রঙিণ কাগজ মুড়িয়ে সৌন্দর্য্য বর্ধন করে প্রস্তুত করা হয় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

আলুটিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খাদেমুল ইসলাম বলেন, শতবর্ষী বটগাছের নীচে একটি শহীদ মিনার ছিল। যা গত ৫/৬ বছর আগে বটগাছের ঢাল পড়ে ভেঙে যায়। এরপর থেকেই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

আলুটিলা বটতলী হাই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এমরান হোসেন বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। তবে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার অর্থায়নে খুব শীগ্রই এখানে শহীদ মিনার নির্মানের কাজ শুরু হবে।

মাটিরাঙা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকাটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকাটা দু:খজনক মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃলা দেব মাতৃভাষা আর ভাষা শহীদদের প্রতি তাদের এ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসনীয়। শীঘ্রই ওখানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন