মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টে নির্মিত হচ্ছে দুইটি অস্থায়ী ক্রসবাঁধ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে অকার্যকর হয়েপড়া চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যাম মেরামতের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরী প্রকল্প গ্রহণ করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড।

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের তড়িৎ হস্তক্ষেপে উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ড্যামের উপরে নিচের দুইঅংশে নির্মাণ করা হচ্ছে মাটির তৈরি দুটি অস্থায়ী ক্রসবাধ।

বুধবার বেলা দশটার দিকে একটি ক্রঁসবাধ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে অপর একটি বাঁধ নির্মাণ কাজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান।

এদিকে যথাসময়ে অকার্যকর হয়ে পড়া পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি মেরামতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরী প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে চলতি মৌসুমে নদীর মিঠা পানির সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদে সুফল পাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের ড্যামটির তিন নম্বর স্প্যানের রাবার দেবে গিয়ে নদীতে ধরে রাখা উজানের মিঠাপানি ভাটির দিকে নেমে যেতে থাকে। এই অবস্থায় চকরিয়া পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার চিরিঙ্গা, সাহারবিলসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হলে আতঙ্ক দেখা দেয় কৃষকের মাঝে।

এ অবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম ও পাউবো কঙবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী ঘটনাস্থল পরির্দশন করে তাৎক্ষনিক অকার্যকর হয়ে পড়া রাবার ড্যাম মেরামতের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে ড্যামের উপরে-নিচের অংশে মাতামুহুরী নদীতে মাটি ফেলে শুরু করা হয় দুইটি অস্থায়ী মাটির ক্রসবাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম।

তিনি বলেন, বুধবার সকালের দিকে একটি ক্রসবাঁধ নির্মাণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে অপর একটি বাঁধ নির্মাণ কাজ। এর পর কাজ শুরু হবে ড্যামের তিন স্প্যানের মধ্যে ফুটো (ছিদ্র) হওয়া এক স্প্যানের রাবার মেরামতের কাজ।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী প্রকল্পের অধীনে মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা রাবার ড্যামের পাশে মাটি ফেলে দুটি অস্থায়ী ক্রসবাঁধটি নির্মাণের কাজ করছেন মের্সাস চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পাউবো কাজটি বাস্তবায়নে এখনো কোন ধরণের অর্থ বরাদ্দ দেননি। তারপরও এমপি জাফর আলমের অনুরোধে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের জনগনের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে নিজের টাকায় ক্রসবাঁধ নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জামাল হোসেন চৌধুরী।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল হোসেন চৌধুরী জানান, তাৎক্ষনিক অর্থ বরাদ্দ না পেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কার্যাদেশ পাওয়ার পর মাটির তৈরি দুটি ক্রসবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশা করছি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। দ্রুতসময়ে কাজটি বাস্তবায়নে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন, পরিষদের সকল সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিআইপি জাফর দিনরাত প্ররিশ্রম করছেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এবং কৃষকদের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখেই অকার্যকর হওয়া ড্যামটির তিন স্প্যানের মধ্যে ফুটো এক স্প্যানের রাবার রিপিয়ারিংয়ের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। তার আগে মাটি ফেলে অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে ঠিকাদার নিয়োগ করে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন অর্থবরাদ্দ পাওয়া যায়নি।’

চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি আলহাজ জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) তৈরি করে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাটির বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ হয়ে আসছিলেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। ২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে ড্যাম দুটির কাজ বাস্তবায়ন করেন। এতে এরপর থেকে নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করে আসছিলেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক। তবে মাঝেমধ্যে ড্যাম দুটিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিলেও পরবর্তীতে রিপিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সচল করে আসছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন