মাতারবাড়ি-ধলঘাট রক্ষায় ১৭.৭৫ কিলোমিটার ‘সুপার ডাইক’ নির্মাণের উদ্যোগ

fec-image

* সম্ভাব্য ব্যয় ২ হাজার ৮৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা * নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোহেলিয়া নদী ও মাতারবাড়ি চ্যানেল খনন * ব্লক দ্বারা প্রতিরক্ষার কাজসহ ১৭.৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ * বেড়িবাঁধজুড়ে যান চলাচলের রাস্তা * বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দীঘি ২টি * মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো রেগুলেটর অপসারণ * পোল্ডারের অভ্যন্তরে ১৫টি খাল খনন

ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই উদ্বেগ বাড়ে মহেশখালীর মাতাবরাড়ি ও ধলঘাটের বাসিন্দাদের। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি ও সড়ক-উপসড়ক। অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় দ্বীপবাসী। মাতারবাড়ি-ধলঘাটবাসীকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা ও সাগরের উচ্চ জোয়ারের প্রভাবমুক্ত রাখতে ‘সুপার ডাইক’ তথা শক্তিশালী বেড়িবাঁধ করার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নকশা, প্রকল্প ডিজাইন, প্রয়োজনীয় অর্থ পরিকল্পনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। উচ্চপর্যায়ে মতামতের জন্য কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে প্রকল্পের ফাইল মন্ত্রণালয়ে যাবে। সম্ভাব্য অর্থদাতা সংস্থার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) একনেকের সভায় প্রকল্পটি উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাঙ্খিত ‘সুপার ডাইক’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবমুক্ত হবে মাতারবাড়ি ধলঘাট। এখানে নিরাপদ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার সুযোগ তৈরি হবে। উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে। মান বাড়াবে জীবন জীবিকার। এতেকরে মাতাবরাড়ি-ধলঘাটে উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ হবে। ভাগ্য বদলাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফিরবে সুদিন। সাগর তাড়িত এলাকায় আসবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

পাউবো অফিসের তথ্য মতে, ব্লক দ্বারা প্রতিরক্ষার কাজসহ ১৭.৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের এই মহাপ্রকল্পে থাকছে মিঠাপানি বা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দীঘি খনন, খাল পুনঃখনন, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কোহেলিয়া নদী, মাতারবাড়ি চ্যানেল ও নূনাছড়ি খাল খনন করা হবে। ১৭.৭৫ কি.মি. বাঁধের ঢাল সংরক্ষণসহ সুপার ডাইক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ কোটি ৯৫ লা টাকা। পুরো বেড়িবাঁধজুড়েই থাকবে যান চলাচলের রাস্তা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটকে সাগরের উচ্চ জোয়ারের প্রভাবমুক্ত রাখতে ‘সুপার ডাইক’ তথা শক্তিশালী বেড়িবাঁধের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিজাইনসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। ‘সুপার ডাইক’ নির্মাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচবে মাতাবরাড়ি ও ধলঘাট। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরবে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রকল্পের ধরণ সম্পর্কে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বিদ্যমান মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো রেগুলেটর অপসারণসহ রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে ১৪টি। যেখানে ৩ ভেন্টের ১১টি ও ২ ভেন্টের তিনটি। পোল্ডারের অভ্যন্তরে খাল খনন হবে ১৫টি। যার পরিমাণ ১৯.২২ কিলোমিটার। নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোহেলিয়া নদী, মাতারবাড়ি চ্যানেল ও নূনাছড়ি মিলে ২০.১৫ কিলোমিটার খাল খনন হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দীঘি থাকবে ২টি। ভূমি ভরাটের কাজ চলবে ৩২৫ একর জমিতে। ৫০ হেক্টর মতো ভূমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটিতে এইচবিবি রোড নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুপার ডাইক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নৌপথের গতি বৃদ্ধি পাবে। এলাকায় জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ দূর হবে। অভ্যন্তরীণ পানির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন